অবশেষে মারা গেলেন চুয়াডাঙ্গা রাজপথের হাসিনা বেগম

 

 

রহস্যাবৃত বস্তায় গচ্ছিত অর্থেই দাফন কাফন

মাহমুদ কামরান: জীবিত থাকতে যে বস্তায় হাত দিতে দেননি কারো, সেই বস্তার রহস্য ভেদ হলো বৃদ্ধার মৃত্যুর পর। বস্তা খুলে পাওয়া গেছে তিল তিল করে গচ্ছিত প্রায় ৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৫শ ২০ টাকা চলার উপযুক্ত, বাকিগুলো পচে ছাতা ধরে এখন অচল। গোনারও অনুপোযোগী। তার গচ্ছিত অর্থের কিছু অংশ দিয়েই দাফন-কাফনের খরচ মেটানো হয়। বাকি অংশ দিয়ে হাসপাতাল চত্বরেই আয়োজন করা হবে বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডের এক কোণে পড়ে থেকেই মারা যান তিনি। ঠিক কখন মারা গেছেন তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ। বিকেলে যখন দরদি আয়া মর্জিনা মুখে তুলে দিতে যান খাবার, তখনই টের পান মারা গেছেন বৃদ্ধা হাসিনা বেগম। এরপরই মাথার নিচে থাকা বস্তায় নির্বিঘ্নে হাত দেন মর্জিনাসহ হাসপাতাল এলাকার কিছু দোকানি। তারই বস্তা খুলে দেখেন টাকাসহ পচে বিনষ্ট হওয়া পাউরুটি।

টাকাগুলো যখন যেভাবে পেয়েছেন বৃদ্ধা হাসিনা বেগম, তখন সেভাবেই ওই বস্তায় রেখেছেন। সে কারণেই বস্তায় হাত দিতে দিতেন না কারো। কেউ হাত দিতে গেলেই চিৎকার করে উঠতেন। দুর্বল শরীরেও মারমুখি হয়ে উঠতেন তিনি। কোথায় বাড়ি, কোথায় তার আপনজনেরা? এসব প্রশ্নের জবাব দীর্ঘদিনে না মিললেও মৃত্যুর পর অবশ্য হাসপাতাল এলাকারই এক হোটেলের নারীশ্রমিক জাহানারা খাতুন এগিয়ে গিয়ে নিজেকে ওই বৃদ্ধার পুত্রবধূ বলে দাবি তোলেন। তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ওই বৃদ্ধার বাড়ি খুলনা দৌলতপুরের দিঘলিয়া। স্বামীর নাম মৃত আব্দুল বলেও জানান জাহানারা। অবশ্য এ দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করেন অনেকে।

হাসিনা বেগম আনুমানিক ৭ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার রাজপথকে নিজের বাড়ি করে নেন। তিনি কখনো স্টেশনে, কখনো শহীদ হাসান চত্বরে, আবার কখনো সাতগাড়ির মোড়ে রাতযাপন করতেন। বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। হাড়ের সাথে লেগে যাওয়া চামড়া, দাঁতগুলোও ঝরে যাওয়া। মাঝে মাঝেই চলাচলের ক্ষমতা হারাতেন। ভর্তি করা হতো হাসপাতালে। সর্বশেষ তাকে গত ২০ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল তিনি মারা গেলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জান্নাতুল মওলা কবরস্থান মসজিদে জানাজা শেষে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়। তিনি সব সময়ই সাথে রাখতেন একটি বস্তা। ওই বস্তা কাউকে ছুঁতে দিতেন না। সেই বস্তা খুলে পাওয়া টাকা দিয়েই দাফন করা হলো। দাফন কাফনে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭শ ৮০ টাকা। অবশিষ্ট টাকা দিয়েই সম্পন্ন করা হবে কালমাছানি।