অবশেষে চাচাতো ভাই জাকিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা : থানায় এজাহার গ্রহণের নির্দেশ

আলমডাঙ্গা হাড়োকান্দির শিশু ভুন্দির লাশ ৩ দিনের মধ্যে তুলে ময়নাতদন্তের আদেশ : অপহরণ মামলায় গ্রেফতারকৃতরা মুক্ত

 

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে আলমডাঙ্গা হাড়োকান্দির ভুন্দির চাচাতো ভাই জাকিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে আদালতে। আদালত তিন দিনের মধ্যে ভুন্দির লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য আলমডাঙ্গা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং মামলাটি থানায় এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিহত ভুন্দির বোন আমেনা খাতুন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা আমলি আদালতে গতকাল এ মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে ভুন্দির মা সাবিনা অপহৃত হয়েছেন বলে ভুন্দির পিতার দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত দুজনকে গতকাল সকালে ছেড়ে দিয়েছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন আইলহাস ইউনিয়নের হাড়োকান্দি গ্রামের দরিদ্র আবুল কাশেমের মেয়ে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল আরা ওরফে ভুন্দি (১১) গত ৩১ আগস্ট সকালে বাড়ির অদূরবর্তী নুড়িতলা মাঠে তাল কুড়োতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন সকালে ওই মাঠের আনারুলের পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রচার করা হয় ভুন্দিকে জিনেরা হত্যা করেছে। পরে গুঞ্জন ওঠে ভুন্দির চাচাতো ভাই গ্রামের ওসমানের ছেলে কলেজছাত্র জাকির হোসেন ভুন্দিকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ পুকুরে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখে। কিন্তু এ গুঞ্জনে আমল দেয় না আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের এসআই জিয়াউল হক জিয়া। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেন তিনি। গ্রামবাসীরা দাবি তোলে ভুন্দির হত্যারহস্য উন্মোচনের জন্য। কয়েকদিনের মধ্যে সোচ্চার হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। এলাকার তিনটি বিদ্যালয়ের শ শ ছাত্র-ছাত্রী গত ৪ সেপ্টেম্বর ভুন্দির হত্যারহস্য উন্মোচন ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ভুন্দিকে জিনে নিয়ে গেছে এবং পরবর্তীতে ভুন্দিকে জিনে মেরে ফেলেছে বলে প্রচারকারী মাদরাসার দু শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন অবস্থা বেগতিক দেখে মাদরাসা থেকে সটকে পড়েন। এরপর তারা আর মাদরাসায় ফেরেননি বলে গ্রামবাসী জানায়।

এরই মধ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বর নিহত ভুন্দির বোন আমেনা খাতুন ও ভগ্নিপতি সায়েদ আলী আলমডাঙ্গায় থানায় এ ব্যাপারে মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা নেয় না। পরবর্তীতে গত রোববার দু মেয়ে আমেনা খাতুন ও মোমেনা খাতুনকে সাথে নিয়ে ভুন্দির মা সাবিনা বেগম চুয়াডাঙ্গায় আসেন জেলা লোকমোর্চা ও আইনজীবীদের সাথে মামলার পরামর্শ নিতে। একপর্যায়ে মামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে ওইদিন দুপুরে ভুন্দির পিতা আবুল কাশেম আলমডাঙ্গা থানায় ভুন্দির মাকে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে মামলা করেন। মামলা করতে না করতেই গ্রেফতার করা হয় মিনাজ উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন ডাবলু ও আব্দুল হামিদকে। এরা ভুন্দি হত্যা মামলার সাক্ষী হতে চাওয়ার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে অপহরণের মিথ্যা মামলা করা হয় বলে ভুন্দির মা সাবিনা ওইদিন রাতে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান। রাতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হামিদকে ছেড়ে দেয়া হয়। গতকাল সোমবার সকালে বাকি দুজনকেও ছেড়ে দেয়া হয় বলে গ্রামবাসী মাথাভাঙ্গাকে জানান।

এদিকে গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা নেহালপুরের সায়েদ আলীর স্ত্রী ভুন্দির বড় বোন আমেনা খাতুন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা আমলি আদালত খ অঞ্চল আলমডাঙ্গায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে হাড়োকান্দির ওসমান আলীর ছেলে ভুন্দির চাচাতো ভাই কলেজছাত্র জাকির হোসেনকে। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আব্দুল হালিম এ মামলায় আদেশ দেন। আদেশে বলা হয় ‘লাশ বিধি মোতাবেক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আগামী ৩ দিনের মধ্যে উত্তোলনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আলমডাঙ্গা থানাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো এবং নালিশি দরখাস্তটি সরাসরি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমডাঙ্গা থানাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেন, অ্যাকশন এইডের প্রজেক্টের এলআরপি ম্যানেজার নুঝাত পারভীন, জেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি, নির্বাহী সদস্য অ্যাড. এমএম শাহাজাহান মুকুল, অ্যাড. আসলাম হোসেন, অ্যাড. আকবর আলী, লিটু বিশ্বাস, জুলিয়াস আহমেদ মিল্টু, জীবননগর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জেহালা ইউনিয়ন লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক দেবেন্দ্রনাথ দোবে বাবুলাল ও লোকমোর্চার সচিব শাহানাজ পারভীন শান্তি।