অবরোধ : ৭১ ঘণ্টায় নিহত ২২ : আহত ৩ সহস্রাধিক

স্টাফ রিপোর্টার: ব্যাপক সহিংসতা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের মধ্যদিয়ে শেষ হলো বিরোধীজোটের ডাকা টানা ৭১ ঘণ্টার অবরোধ। একতরফা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার প্রতিবাদে ডাকা অবরোধের শেষ দিনেও উত্তপ্ত ছিলো সারাদেশ। সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিলো রাজধানী। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে ঘটেছে ব্যাপক সহিংসতা। অবরোধের তিন দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে বিজিবি সদস্য ও সাধারণ নাগরিকসহ সরকারি দল ও বিরোধীজোটের অন্তত ২২  জন নিহত হয়েছেন। অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশজুড়ে রেল সড়কে ঘটে ব্যাপক নাশকতা। এতে রেল যোগাযোগ কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর। সরকারি ও বিরোধীদলের কার্যালয়েও পাল্টাপাল্টি হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
অবরোধের প্রথম দিন সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে কুমিল্লায় এক বিজিবি সদস্যসহ ২ জন, সাতক্ষীরা সরকার দলীয় দু নেতা, বগুড়ায় যুবদলকর্মী, সিরাজগঞ্জ যুবদল নেতা ও ফেনীতে ১ সিএনজি অটোরিকশা চালক নিহত হন। দ্বিতীয় দিন সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে চট্টগ্রামে এক যুবদল নেতাসহ ৩ জন, সাতক্ষীরায় জামায়াত নেতাসহ ২ জন, সিরাজগঞ্জে জামায়াত ও ছাত্রদলের ২ জন ও গাজীপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও যশোরে জামায়াত নেতা নিহত হন। এছাড়া রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণে আহত আনোয়ারা বেগম ও মোজাম্মেল হক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হলে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন অন্তত ১৯ যাত্রী। গুরুতর আহতদের মধ্যে নাহিদ নামে এক যুবক রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

অন্যদিকে রাতে নরসিংদীর ঘোড়াশালে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে ২ ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। অবরোধের প্রথম দিন কক্সবাজারের চকোরিয়ায় গ্রেফতার যুবদলের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হালিম গতকাল জামিনে মুক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরিবারের দাবি, আটক অবস্থায় পুলিশি নির্যাতনে অসুস্থ হওয়ায় তাকে জামিন দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে সেখানেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এদিকে বিরোধী দল বিএনপি দাবি করেছে, অবরোধের তিন দিনে ১৮ দলের মোট ৯ জন নিহত, ৩২০০ আহত হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. (অব.) আসম হান্নান শাহ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাছির ও সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকারসহ তিন দিনে ১২০০ গ্রেফতার, ১৬ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে মামলায় আসামি ও ২২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিয়েছে। অবরোধ কর্মসূচিতে রাজপথে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন রাজশাহী সিটির মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনার মনিরুজ্জামান মনি ও কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু।

এছাড়া রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে একাধিক মামলা। অবরোধের শেষ দিনেও রেললাইন উৎপাটনের ঘটনা ঘটেছে বগুড়া, কুমিল্লা ও নওগাঁয়। ফলে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে রাজধানী থেকে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পড়ে চট্টগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলের সাথে। বন্ধ ছিলো রাজধানীর সাথে দূরপাল্লার বাস চলাচল। বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটেছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পটুয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, সাভার, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, গাজীপুরসহ অন্তত ২০ জেলায়। অবরোধে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে আগামী রোববার রাজশাহীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে স্থানীয় বিএনপি।