অবরোধের আগুনে প্রাণ গেলো আরো একজনের

স্টাফ রিপোর্টার: ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে গত রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত অন্তত ১৬টি যানবাহনে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এদিকে রংপুর মেডিকেলে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ এক যাত্রীর গতকাল মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে নাটোরে ককটেল বোমায় দুইজন আহত হয়েছে। অবরোধের আগুনে পুড়ে প্রাণ হারালেন আরো একজন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে মারা গেছেন অগ্নিদগ্ধ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল মালেক (৫০)।

আবদুল মালেকের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার রামগঞ্জ বাজার এলাকায়। গত বুধবার রাতে দিনাজপুরের কাহারোলের ভাতগাঁও সেতু এলাকায় ট্রাকে ছোড়া পেট্রলবোমায় তিনি অগি্নদগ্ধ হন। পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি ট্রাকে করে বিশ্ব ইজতেমা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন আবদুল মালেক। কথা বলার শক্তি ছিল না তার। মুখ, দুই হাত ও বুক আগুনে দগ্ধ হয়েছিলো। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে তার।

স্বামীর মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে বসে আহাজারি করছিলেন স্ত্রী মমতা বেগম। তিন ছেলে ও দু মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আবদুল কাদের খান আবদুল মালেকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বার্ন ইউনিটের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির অধ্যাপক সাজ্জাদ খন্দকার।

সাজ্জাদ খন্দকার বলেন, বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আট রোগীকে অচিরেই ছেড়ে দেয়া হবে। এদের মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় আহত চার রোগী রয়েছেন। গত শুক্রবার এ হামলা চালানো হয়। অগি্নদগ্ধ রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্তলাল সেনের পরামর্শ, কেউ অগ্নিদগ্ধ হলে সাথে সাথে দগ্ধ স্থানে অন্তত আধাঘণ্টা পানি ঢেলে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। এদিকে অবরোধের পক্ষে-বিপক্ষে ঝিনাইদহে মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ ও হরতালের প্রতিবাদে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন পৌর যুবলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শহরের পাগলাকানাই থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পাগলাকানাই মোড়ে এক সমাবেশে মিলিত হয়। পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক ফজল মাহমুদ পাভেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশিদুর রহমান রাসেল, রাজু আহমেদ, পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ আজিজ লাবু, যুবলীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম সজল, পিপুল হোসেন, আসাদুজ্জামান সুজন ও জাহিদুল ইসলাম।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইস্যুবিহীন হরতাল-অবরোধ করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করছে। নীতিহীন রাজনীতির ক্ষমতালিপ্সার আগুনে মানুষ পুড়িয়ে হত্যাসহ সব ধরনের সহিংসতা করছে বিএনপি-জামায়াত। কিন্তু দেশবাসী এখন সজাগ। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জনগণ কখনোই পছন্দ করে না, মেনেও নেবে না।