অপহৃত কম্পিউটার ব্যবসায়ী আবু শামা ও মাসুদ রানা মুক্ত : ঝিনাইদহের লক্ষ্মীপুর থেকে উদ্ধার

 

অটোর আড়ালে ছিলো অপহরক : কুড়েঘরে আটকে মুখে তুলে দিত ভাত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার কম্পিউটার ব্যবসায়ী আবু শামা ও তার কর্মচারী মাসুদ রানা মুক্ত হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা পরিষদের পর মুক্ত হয়ে মসজিদে আশ্রয় নেয়ার পর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। একাধিকসূত্র এ তথ্য জানালেও পুলিশ বলেছে, অপহৃত আবু শামা ও মাসুদ রানা অপহরণকারীদের ডেরা থেকে পালিয়ে ঝিনাইদহ জেলা সদরের লক্ষ্মীপুরের একটি মসজিদে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে এদেরকে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করে গতরাতে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নেয়া হয়। আজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুজনকে তাদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পদ্মবিলার নীমতলা গ্রামে ফিরিয়ে দেয়া হতে পারে। আবু শামা ও মাসুদ রানা ফিরলেও তাদের মোটরসাইকেলের হাদিস নেই। মুক্তিপণ প্রদানের বিষয়টি অবশ্য অপহৃতের পরিবারের তরফ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। অপহৃতরা মুক্ত হওয়ার পর মুক্তিপণের বিষয়টি জানে না বলে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার একটু আগে ঘরের মধ্যে কোনো শব্দ না পাওয়ার কারণে আমরা একে অপরের বাঁধন খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গ্রামের মধ্যে মসজিদে আশ্রয় নিতে ছুটি। গ্রামের সাধারণ মানুষ আমাদের সন্দেহ করে। আমরা অপহৃত হওয়ার বিষয়টি জানালে তারাই তাদের মোবাইলফোন দিয়ে আমার পিতার মোবাইলফোনে খবর দেন। পিতা পুলিশকে জানায়। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ও ঝিনাইদহ পুলিশ যৌথভাবে লক্ষ্মীপুর গ্রামের মসজিদ থেকে দুজনকে উদ্ধার করে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পদ্মবিলা ইউনিয়নের নীমতলা গ্রামের কুদরত আলীর ছেলে আবু শামা চুয়াডাঙ্গা শহীদ আবুল কাশেম সড়কের ওয়ালটন প্লাজার কম্পিউটার ব্যবসায়ী। তিনি তার দোকান কর্মচারী একই গ্রামের মাসুদ রানাকে সাথে নিয়ে গত ৯ মার্চ রাতে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। কুলচারা-গোপালনগর সড়কের মাঝ থেকে দুজনকে অপহরণ করা হয়। পরে মোবাইলফোনে ৩০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করে অপহরকচক্র। পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলেও একে একে ৬টি দিন কেটে যায়। অপহৃতদের পরিবারে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা। মুক্তিপণ প্রদান করেই দুজনকে মুক্ত করা হচ্ছে বলে গতকাল দুপুরের পর গ্রামে জোর গুঞ্জন ওঠে। এরই এক পার্যায়ে সন্ধ্যায় মোবাইলফোনে খবর পাওয়া যায় অপহৃত দুজন অপহরচক্রের ডেরা থেকে পালিয়ে মুক্ত হয়েছে।

কীভাবে অপহরণ করা হলো? এর জবাব দিতে গিয়ে আবু শামা বলেছেন, রাত তখন ৯টা। দুজন মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি নিমতলায় ফিরছিলাম। কুলচারা-গোপালনগর সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে একটি অটো দেখি। অটোর আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলো একজন। লোকটা হাত তুলে দাঁড়াতে বলে। দাঁড়াতেই রাস্তার পাশ থেকে কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দা নিয়ে ছুটে আসে। আমাদের দুজনেরই হাত ও চোখ বাঁধে। মোবাইলফোনে কথা বলে। আমাদের মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। বসিয়ে রাখে। পরে মাইক্রো আসে। মাইক্রোবাসে তুলে আমাদের নিয়ে যায়। মাঠের একটি কুড়ে ঘরে আটকে রাখে। প্রতিদিনই বলতো, আজ তোদের ছেড়ে দেবো। রাতে বলতো, তোর বাপ কথা শোনেনি, আজ আর ছাড়া হলো না। আমাদের হাত বাঁধা রাখার কারণে ওরাই মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিতো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার একটু আগে যখন বুঝলাম আমাদের আশে পাশে আর কেউ নেই। তখন আমরা দুজন দুজনের বাঁধন খুলে দৌঁড়ে গ্রামের মধ্যে গিয়ে আশ্রয় খুঁজি। গ্রামবাসীর সহযোগিতা চাই।

ঝিনাইদহের লক্ষ্মীপুর থেকে উদ্ধারের সময় অভিযানে অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) কামরুজ্জামান, সদর থানার ওসি লিয়াকত জোসেন , ওসি তদন্ত ফারুকসহ ডিবির এসআই খালিদসহ অনেকে।