অপহরক মকবুলসহ তার দু ছেলে গ্রেফতার : অপহৃত শিশু আব্দুল্লাহকে পাবনার পল্লি থেকে উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানা পুলিশের সফল অভিযান : ওসিসহ অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের সাধুবাদ জানালেন ভিড় জমানো হাজারো জনতা

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি : দামুড়হুদার কোষাঘাটা থেকে অপহৃত শিশু আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর দেড়টার দিকে অপহরক মকবুল ও তার ছোট ছেলেকে রাজশাহী বাঘা থানার ব্যাঙের বাজার থেকে গ্রেফতারের পর তাদের স্বীকারোক্তিতে পাবনার লালপুর দুরিয়া গ্রাম থেকে আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করা হয়। অপহরকের বড় ছেলে জয়কেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে এসআই তোবারেক হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। সাথে ছিলেন অপহৃত শিশুর চাচা সহিদুল ও চাচাতো ভাই আরিফ। পুলিশ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, রাজশাহী বাঘা থানার ব্যাঙের বাজার থেকে অপহরক মকবুল ও তার ছোট ছেলে জনিকে আটকের পর পাবনার লালপুল দুরদরিয়া গ্রাম থেকে অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়। অপহরক মকবুল তার আত্মীয়বাড়িতে শিশুকে বন্দি রেখে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়য়ের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের বিশেষ নজরদারি ও দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জের চৌকশ পদক্ষেপে শেষ পর্যন্ত অপহৃত শিশু আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

এ ঘটনায় অপহৃত শিশুর পিতা আব্দুল খালেক বাদী হয়ে গতকাল রাতে অপহরণকারী মকবুল ও তার বড় ছেলে জয়কে আসামি করে দামুড়হুদা থানায় অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে অপহৃত শিশুকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিকেল থেকেই থানার সামনে উৎসুক জনতা ভিড় জমাতে থাকে। রাত ৮টার দিকে যখন পুলিশ অপহৃত শিশুকে থানায় নিয়ে পৌছায় তখন দামুড়হুদার কোষাঘাটা, উজিরপুর, জয়রামপুর, দেউলীসহ আশপাশ এলাকার হাজারো জনতা তাদেরকে স্বাগত জানায়। এ সময় উৎসুক জনতাকে সামাল দিতে থানা পুলিশের হিমসিম খেতে হয়। উপস্থিত জনতার অনুরোধে রাত ৯টার দিকে অপহৃত শিশু ও অপহরণকারীকে জনতাকে একনজর দেখানো হয়। উপস্থিত জনতা ওসি কামরুজ্জামানের এ সফলতার জন্য সাধুবাদ জানান। এ সময় ওসি কামরুজ্জামান উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা অপরিচিত কাউকে এলাকায় দেখলে সাথে সাথে পুলিশে খবর দেবেন। বিস্তারিত পরিচয় না জেনে এলাকায় কাউকেই বসবাসের সুযোগ দেবেন না।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে কোষাঘাটা গ্রামের আব্দুল খালেক ওরফে হ্যাবার ছেলে আব্দুল্লাহকে মুজিবনগর বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে কৌশলে অপহরণ করে তাকে লালপুরের দুরদরিয়া গ্রামে নিয়ে যায় মকবুল। অপহরণের পর মোবাইলফোনে মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে জানার পর হ্যাবা তার একমাত্র ছেলেকে জীবিত ফিরে পেতে অপহরণকারী মকবুলের সাথে দেনদরবারও শুরু করে। হ্যাবা প্রথমে ছেলে অপহরণের বিষয়টি গোপন করে দেনদরবারের মাধ্যমে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া করলেও পত্রিকায় তা প্রকাশিত হলে পুলিশ অপহরণের বিস্তারিত জানতে তার বাড়ি ছুটে যায়। পুলিশ তথ্য পেয়ে অপহৃত শিশুকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করে। মোবাইলফোন ট্রাকিংসহ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় অপহরকের অবস্থান। এরপরই শুরু হয় গ্রেফতার ও উদ্ধার অভিযান।

উদ্ধার অভিযানে থাকা এসআই তোবারেক হোসেন জানান, ওসির নির্দেশে গত শনিবার বিকেল ৩টার দিকে কনস্টেবল রবিউল হোসেন, সেলিম মিয়া, অপহৃত শিশুর চাচা সহিদুল ও চাচাতো ভাই আরিফকে সাথে নিয়ে মাইক্রোযোগে রাত ৯টার দিকে পাবনা জেলার লালপুরে পৌছায়। রাতে ঈশ্বরদীতে অবস্থান করি এবং সকাল ৭টার দিকে রওনা হই রাজশাহী জেলার বাঘা থানায়। প্রায় ৩০ কিলোমিটার পাঁয়ে হাটার পর দুপুর ১২টার দিকে বাঘা থানার পার্শবর্তী ব্যাঙের বাজার নামক এলাকা দিয়ে অপহরণকারী মকবুলকে হেঁটে যেতে দেখে আমার সাথে থাকা অপহৃত শিশুর চাচাতো ভাই আরিফ। সে আমাকে চিনিয়ে দেয় অপহরণকারী মকবুলকে। এরপর আমি ও কনস্টবেল সেলিম তাদের পিছু নিই এবং অপহরণকারী মকবুল ও তার ছোট ছেলে জনিকে ধরে ফেলি। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক আটক মকুবলকে সাথে নিয়ে আবারও রওনা হই লালপুরের দুরদরিয়া গ্রামে। ওই গ্রামের মকবুলের এক আত্বীয়ের নির্জন ফাঁকা বাড়ি থেকে অপহৃত শিশুকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করি। সেই সাথে ওই বাড়ি থেকেই মকবুলের বড় ছেলে জয়কেও আটক করি। তিনি আরো বলেন, আমরা অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করেছি ঠিকই কিন্তু সব কারিশমাই ছিলো ওসি স্যারের।

অপহরণের পর কীভাবে কোন পথ দিয়ে শিশুকে পাবনার পল্লিতে নেয়া হয়? তাকে কীভাবে রাখা হয় তার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। অপহৃত শিশু ও অপহরকেদের দেয়া তথ্য জানা সম্ভব হলে বিস্তারিত আগামীকাল পত্রিকায় তুলে ধরা হবে।