অপহরক চক্রের নৃসংশতা : মুক্তিপণ না পেয়ে জবাই করে খুন

 

মেহেরপুরের সোনাপুরে অস্ত্রের মুখে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের সোনাপুর গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ শেষে জবাই করে খুন করেছে অপহরকচক্র। দাবিকৃত মুক্তিপণ পরিশোধ না করায় তাদেরকে খুন করা হয়েছে বলে জানান নিহতদের পরিবার। রোববার রাতে ওই ঘটনা ঘটে। রাতভর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধারের তৎপরতা করে ব্যর্থ হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পার্শ্ববর্তী কাঁঠালপোতা গ্রামের মাঠের একটি তামাকক্ষেত থেকে তাদের জবাই করা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের সোনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ (৫৫) ও একই গ্রামের ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম (৫০)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,গত রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে গ্রামের মজনু মিয়ার চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন গ্রামের কয়েকজন। এ সময় ১০-১২ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ওই দুই ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। পরে মজিদ ও আসাদুলের পরিবারের কাছে মোবাইলে ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে চাঁদাবাজরা। কিন্তু পরিবারের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে দু লাখ টাকা মুক্তিপনের প্রস্তাব দিলে অপহরণকারী চাঁদাবাজরা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং এবং ওই টাকায় কাফনের কাপড় কিনে রাখতে বলে। এরপর বারবার আব্দুল মজিদের মোবাইলফোনে ফোন দেয়া হয়। প্রায় সারারাত ফোন বাজলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি।

এদিকে পিরোজপুর ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই আবুল হাশেম জানান- খবর পেয়ে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে অপহৃতদের উদ্ধারে মাঠে নামা হয়। এরপরপরই মেহেরপুর সদর থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী, ওসি (তদন্ত) মেহেদী হাসান থানা পুলিশের একটি দল নিয়ে তাদের সাথে যোগ দেন। সকাল ৭ টা পর্যন্ত চলে খোঁজাখুঁজি। এতে কোনো কাজ হয়নি। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় কৃষকরা মাঠে কাজ করার সময় পার্শ্ববর্তী কাঁঠালপোতা গ্রামের খেড়ের মাঠের হাশেম দর্জির তামাকক্ষেতে আব্দুল মজিদ ও আসাদুলের জবাই করা লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশের সুরোত হাল রিপোর্ট গ্রহণ শেষে লাশ উদ্ধার করে মেহেরপুর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

সন্ধ্যায় নিহতদের লাশ গ্রামে পৌঁছালে পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে সোনাপুর গ্রামের আকাশ ভারি হয়ে উঠে। ওই দিন বাদ এশা সোনাপুর গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়। তাদের দাফন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শরিক হন।

চাঁদার দাবিতে তাদের অপহরণ করে যথা উপযুক্ত মুক্তিপণ না পেয়ে তাদের হত্যা করা হতে পারে এমন দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে অনেকে মন্তব্য করেছেন গ্রাম্য দলাদলির কারণে তাদের নির্মমভাবে খুনের শিকার হতে হয়েছে। গ্রামে মামলত মেম্বারসহ অন্য একটি দলের দীর্ঘ দিনের দলাদলি দৃশ্যমান ছিলো। যে কারণে এর আগে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। মামলত বাহিনীর লোকজন গ্রাম ত্যাগ করে দেশে-বিদেশে অবস্থান নিয়েছে। অন্য একটি দলের প্রায় বিলুপ্তি ঘটলেও গ্রামে নতুন একটি পার্টির (দলের) অবির্ভাব হচ্ছে বলে অনেকে জনিয়েছেন। তবে তাদের দল বা দল নেতা নামকরণ এখনও করা হয়নি।

মেহেরপুর সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, চাঁদার দাবিতে হত্যাকাণ্ড নাকি অন্য কিছু তা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি আরো জানান- স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ দু টি দলের রেশারেশির জের কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

রাতে মেহেরপুর সদর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই মোবারক হোসেন জানান- লাশের ময়না তদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।

আব্দুল মজিদ সোনাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি একজন কাঠ ব্যবসায়ী। তিনি ছিলেন দুই ছেলে সন্তানের জনক। ছেলে আব্বাস ও আব্দুল কুদ্দুস দু’জনই বিবাহিত। তারা কৃষি কাজ করে সংসার চালায়।

আসাদুল ইসলাম সোনাপুর গ্রামের তাফছুদ্দীনের ছেলে। তিনি পেয়ায় একজন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ছিলেন। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। ছেলে নাদের ও মেয়ে দু জনই বিবাহিত। ছেলে কৃষি কাজের পাশাপাশি বাবার পোল্টি ব্যবসা দেখা-শুনা করেন।