অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কেনা হচ্ছে মোবাইল ট্র্যাকার

 

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে ভয়ঙ্কর অপরাধী ধরা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে মোবাইলফোনে আঁড়িপাতার যন্ত্র (মোবাইল ট্র্যাকার) বসানো হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর, বিভাগীয় কমিশনারসহ ২৬ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ যন্ত্র বসানো হবে। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় মোবাইল ট্র্যাকার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, সাইবার ট্র্যাকিং, সাইবার হুমকি, ফৌজদারি মামলার অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে সহায়তার জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবস্ক্রাইভার আইডেনটিটি (আইএমএসআই) বা মোবাইল ট্র্যাকার নামের যন্ত্র কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শুরুতে দেশের ২৬ জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ফোনে আঁড়িপাতা যন্ত্র বসছে। মোবাইল ট্র্যাকার নামের এ যন্ত্রটি জেলাগুলো ছাড়াও খুলনা মেট্রোপলিটন, সিলেট মেট্রোপলিটন, বরিশাল মেট্রোপলিটন, পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন শাখা ও গোপনীয় শাখায় বসানো হবে। সব মিলিয়ে জেলা ও মহানগরগুলোতে ৩৫টি মোবাইল ট্র্যাকার বসানো হবে। পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা হয়, আঁড়িপাতা যন্ত্রগুলো কেনা হলে সাইবার স্ট্যাকিং, সাইবার হুমকিসহ অন্যান্য সাইবার অপরাধ শনাক্ত, উদ্ঘাটন, তদন্ত ও তদন্ত কার্যক্রমে সহায়তা হবে। পাশাপাশি ফৌজদারি মামলার তদন্ত, অপরাধী শনাক্ত করা, গ্রেফতার ও অপরাধ উদ্ঘাটনের সহায়ক হবে যন্ত্রটি। একই সাথে ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গোয়েন্দা কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে এ মোবাইল ট্র্যাকার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে পুলিশ বিভাগে সাতটি মোবাইল ট্র্যাকার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে একটি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে একটি, রাজশাহী মেট্রোপলিটনে একটি, সিআইডিতে একটি, পিবিআইতে একটি ও ৱ্যাবে দুটি আইএমএসআই বা মোবাইল ট্র্যাকার রয়েছে। নতুন করে আরো ৩১টি মোবাইল ট্র্যাকার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ।
৩১ আগস্ট পুলিশ বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে ট্র্যাকারগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স। টিওঅ্যান্ডইভুক্ত হলেই দামি এ যন্ত্রটি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথিতে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর এক চিঠিতে মোবাইল ট্র্যাকার কেনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পুলিশ সদর দফতরের ওই চিঠিতে বলা হয়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতত্পরতায় দ্রুত, কার্যকর ও নিরাপদ অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বিভাগের অভিযান কার্যক্রমে সক্ষমতা বাড়াতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ৩৩টি ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবস্ক্রাইভার আইডেনটিটি (আইএমএসআই) বা মোবাইল ট্র্যাকার কেনা প্রয়োজন। পুলিশ বিভাগের বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোতে (টিওঅ্যান্ডই) মোবাইল ট্র্যাকার অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এর ভিত্তিতে এ বছরের ১০ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি ফিরতি এক চিঠিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৩টি ট্র্যাকার কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। কিন্তু অর্থ বিভাগ ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেট্রোপলিটনের জন্য একটি করে দুটি মোবাইল ট্র্যাকার পুলিশ অধিদফতরের টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্ত করার সম্মতি দেয়। ৩১ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ইক্যুইপমেন্ট) মো. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতত্পরতার কৌশল ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় রূপ নিচ্ছে। প্রতিনিয়তই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন কৌশলে তাদের অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর ওপরও অপরাধী/জঙ্গিরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে আক্রমণ পরিচালনা করছে। বিশেষ করে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীসহ বিদেশি নাগরিকদের ওপর জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আক্রমণের বিষয়টি স্পষ্ট। পুলিশের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রপাতির অভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের এসব অপতত্পরতা নির্বিঘ্নে চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর জানমাল, সরকারি সম্পদ, নিরীহ জনগণ এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এসব জঙ্গি ও সন্ত্রাসীর অপতত্পরতার দ্রুত, কার্যকর ও নিরাপদ অপারেশন পরিচালনার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ৩১টি ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবস্ক্রাইভার আইডেনটিটি (আইএমএসআই) বা মোবাইল ট্র্যাকার জরুরিভিত্তিতে কেনার জন্য পুলিশ বিভাগের বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
চিঠিতে বলা হয়, মোবাইল ট্র্যাকার যন্ত্রটি পুলিশ বিভাগের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কাজে ব্যবহার অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রপাতি। এ কারণে জেলাগুলো ও এর আশপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যদের অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য এ যন্ত্রটি প্রয়োজন।
টিওঅ্যান্ডইতে মোবাইল ট্র্যাকার অন্তর্ভুক্তির পেছনে যুক্তি তুলে পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা হয়, এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর ওপরও অপরাধী/জঙ্গিবাদীরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে আক্রমণ করতে পিছপা হচ্ছে না। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীও অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী চক্র বিভিন্ন ধরনের আইসিটি ডিভাইস যেমন মোবাইলফোন, ফেসবুক, টুইটার, ই-মেইল, ভাইভার, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালিয়ে থাকে। সব আধুনিক প্রযুক্তি বিশেষত টুজি, থ্রিজি এবং সর্বাধুনিক ফোর জি প্রযুক্তির মোবাইল ফোন অপরাধ ও অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বেশি ব্যবহূত। তাই অপরাধের কারণ অনুসন্ধান, অপরাধী শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন কাজে দ্রুত ও অতি অল্প সময়ে নিখুঁতভাবে আসামি বা অপরাধীকে গ্রেফতারের প্রয়োজনে মোবাইল ট্র্যাকার অত্যন্ত কার্যকর যন্ত্র। এ যন্ত্রের সাহায্যে পাঠানো তথ্য দিয়ে মোবাইল ফোনসহ অপরাধীর অবস্থানকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব।
এ জন্য খুব শিগগিরই যুক্ত হচ্ছে নতুন মোবাইল ট্র্যাকার।