অপমান সইতে না পেরে লাশ হলেন দু সন্তানের জননী জুলি

পাঁচিল টপকে পড়শির বাড়িতে প্রবেশের সময় হুড়মুড় করে যুবক পুকুরে : নানা গুঞ্জন!

 

স্টাফ রিপোর্টার: পাঁচিল টপকে প্রতিবেশীর বাড়ি ঢোকার সময় পাঁচিল ভেঙে পুকুরে পড়ে পালানো বাবুকে নিয়ে নানা অপবাদের এক পর্যায়ে লাশ হলেন দু সন্তানের জননী জুলিয়া খাতুন জুলি (৩০)। নালিশ, সালিস আর অপবাদ সইতে না পেরে জুলি বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। এ দাবি তার পরিবারের সদস্যদের। পুলিশ অবশ্য এ মৃত্যুর আড়ালে রহস্য থাকতে পারে সন্দেহে অভিযোগের প্রেক্ষিতে লাশ উদ্ধার করেছে। আজ শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত হতে পারে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জয়রামপুর ডাক্তারপাড়ার মোফাজ্জেল হোসেনের সাথে দামুড়হুদা দশমীর শামসুল হকের মেয়ে জুলির বিয়ে হয় আনুমানিক ১৬ বছর আগে। বিয়ের পর এদের সংসারে আসে এক ছেলে ও এক মেয়ে। মোফাজ্জেল কাঁঠালতলার ফার্নিচারব্যবসায়ী। তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, সপ্তাখানেক আগের এক রাতে একই পাড়ার সহিদুল ইসলামের ছেলে রাজমিস্ত্রির জোগালে বাবু পাঁচিল টপকে প্রতিবেশী মোফাজ্জলের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। পাঁচিল ভেঙে বাবু পড়ে যায় পুকুরে। এরপরও বাবুকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ওঠে। ধর্ষণ অপচেষ্টারও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। থানায় নালিশও করেন জুলির স্বামী। পরশু পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নামে জুলিকে নানা প্রশ্ন করে। উপস্থিত জনতা হাসাহাসি করে। এসবেরই এক পর্যায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দানাদার বিষপান করেন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গ্রামের ডাক্তার ও পরে নেয়া হয় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দুপুরে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। মারা গেলে জুলির মৃতদেহ তার পরিবারের সদস্যরা জয়রামপুরে নেন। অপরদিকে জুলির পিতা পক্ষের নিকট থেকে তথ্য পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে মৃতদেহ।

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানান, গত রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিবেশী মোফার বাড়ির সীমানা পাঁচিল হুড়মুড় করে ভাঙার শব্দ শুনে গৃহবধূ জুলির বড় জা রমজানের স্ত্রী রবিছন কে কে বলে চিৎকার দিয়ে পুকুরের দিকে ছুটে যান। বাবু কাতরাতে কাতরাতে বলে চাচি আমি বাবু। তুই পাঁচিলে উঠেছিলি কেন? এ কথা জিজ্ঞাসা করলে বাবু বলে পরে বলবো। বারিছন তার পিছু নেয়। বাবুর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের লোকজনের সাথে ঘটনাটি বলে। এ সময় বাবুর মা বলে ও চুরি করতে যায়নি। মোফার বউ তাকে ফোন করে ডেকেছিলো। বিষয়টি নিয়ে পরদিন সকালে গৃহবধূর স্বামীর পরিবারের লোকজন স্থানীয় মাতবরদের জানান। সালিসের আয়োজন করা হয়। সালিসে বাবু হাজির না হলে তা ভেস্তে যায়। পরে থানায় নালিশ করা হয়। ধর্ষণের অপচেষ্টার অভিযোগ তোলা হয় বলে জুলির স্বামীপক্ষের লোকজন জানালেও দামুড়হুদা থানার ওসি অবশ্য বলেছেন, চুরির জন্য প্রবেশ করতে একইপাড়ার শাহিদুলের ছেলে রাজমিস্ত্রির জোগালে বাবু চুরির জন্য বাড়ির পাঁচিল টপকে ছিলো বলে অভিযোগ করা হয়েছিলো। জুলির পিতাপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে করা হয়েছে।

স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, নিহত গৃহবধূ জুলির বড় জা রবিছন যেমন ঘটনার পর ছোটাছুটি করেছেন। তেমনই পরদিন থেকে বাবুর সেজ চাচি প্রবাসী নজুর স্ত্রী লিপি প্রতিবেশীদের কাছে বিষয়টি নিয়ে কুৎসা রটিয়েছে। এসব কারণেই আত্মহত্যা করেছে জুলি। অবশ্য জুলি যখন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান, তখন তার শয্যাপাশে থাকা লোকজন অভিযোগ করে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ করা হলে গতপরশু বুধবার থানা থেকে পুলিশ আসে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। স্থানীয় লোকজন ভিড় জমায়। লোকজনের সামনেই পুলিশ আপত্তিকর প্রশ্ন হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করলে জুলি লজ্জায় পড়ে। এ কারণেই বিষপানে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। অপরদিকে গৃহবধূ জুলি বিষপান করে মারা গেছে এ সংবাদটি অভিযুক্ত বাবু জানতে পেরে গ্রামেরই এক বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করাকালীন কাউকে কিছু না বলে আত্মগোপন করেছে।