অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করলেও হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে শ্রীমতি আভারানী

 

বাগদিবাড়ি পৌঁছুনোর পূর্বেই কি কাঠব্যবসায়ী আমিনুলকে অপহরণ করা হয়? ঘোরতর সন্দেহ

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ আভারানীর মেটে ঘরে হত্যার আলামত পেয়েছে বলে দাবি করলেও স্থানীয়দের সন্দেহের তীর অন্যদিকে। আভারানীও গ্রেফতারের পর থেকে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন। তিনি আমিনুল ইসলামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ সম্পর্কের কথা অকপটে স্বীকার করে সেদিন মোবাইলফোনে কি কথা হয়েছে তাও ভনিতা ছাড়াই বলছেন স্পষ্ট ভাষায়। ফলে হত্যা রহস্যের নতুন মোড় ঘুরতে পারে বলে মন্তব্য অনেকের।

যে মোবাইলফোনের সূত্র ধরে আভারানীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, সেই মোবাইলফোন বিষয়ে আভারানী বলেছেন, ‘১৩ ডিসেম্বর বিকেলে ও সন্ধ্যায় মোবাইলফোনে কয়েকবার কথা হয়। আমিনুল ইসলাম বলেছিলেন, তোমার ছেলেদের পাওনা টাকা আমি ফেরার সময় দিয়ে তার পর বাড়ি যাবো। সন্ধ্যায় ফোনে আসছি বললেও আমাদের বাড়ি আসেননি। কীভাবে কি হয়েছে কিছুই বলতে পারবো না। তাছাড়া আমরা কেন আমিনুলকে মরবো। যে আমিনুলের ক্ষেতে আমি কাজ করি, আমার দু ছেলেও আমিনুলের গাছ-কাঠ কাটার কাজ করে। ওই কাঠ কাটা কাজের জন্যই দু ছেলের পাওনা টাকা দেয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে আসতে চেয়েছি। এলো না। নিখোঁজ হলো। ৬ দিন পর পাওয়া গেলো লাশ। আমাদের ধরে পুলিশ জেলে পুরলো।’ এক প্রশ্নের জবাবে আদিবাসী তথা বাগদি পরিবারের বিধবা আভারানী বলেছেন, ‘আমিনুলের সাথে বহুদিন ধরে চেনা-জানা। অনেক কিছুই হয়েছে। তবে বাড়িতে কোনোদিনই দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হইনি। যা হয়েছে বাড়ির বাইরে।’

আভারানী, তার দু ছেলে সঞ্জয় ও সুজন এবং দু ছেলের পিশি তথা ফুফু তুলশি রানীকে গতকাল আমিনুল ইসলাম খুন-গুম মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। গতকালই পুলিশ প্রহরায় নেয়া হয় জেলা কারাগারে। গতপরশু সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি আইলহাস বাজারের অদূরবর্তী কুড়ির মাঠের ভুট্টাক্ষেত থেকে আমিুল ইসলামের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের একদিন আগেই আইলহাসের কাঠব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামর মেয়ে ফাতেমা খাতুন মিতা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামির তালিকায় রাখা হয় পার্শ্ববর্তী রায় লক্ষ্মীপুর বাগানপাড়ার তহির আলীর ছেলে জহুরুল ইসলামকে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে। জেলা গোয়েন্দা দফতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তেমন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পরশুই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত জেলহাজতে প্রেরণের অদেশ দেন। অপরদিকে তুলশি  রানীর বাড়ির অদূরবর্তী মাঠের ভুট্টাক্ষেত থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত করে বলে, হত্যা রহস্য উন্মোচন হয়েছে। আভারানীর মেটে ঘরেও হত্যার আলামত রয়েছে। এ মন্তব্য করার পাশাপাশি আভারানীর দু ছেলে সঞ্জয় (২০) ও সুজন (২২) এবং এদের পিশিকে গ্রেফতার করে আলমডাঙ্গা থানা কাস্টডিতে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তেমন তথ্য বের করতে না পারলেও গতকাল আমিনুল হত্য মামলায় ৪ জনকে আদালতে সোপর্দ করে। অপরদিকে আভারানী কেন আমিনুলকে হত্যা করবে। হত্যা করে  দায় আভারানীর ওপর চাপাতেই তার বাড়ির অদূরে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় অধিকাংশ সচেতন মানুষ। তাদের অভিমত, আভারানীর বাড়িতে আমিনুলের আসা-যাওয়া নতুন নয়। আইলহাস বাজার সংলগ্ন রায়লক্ষ্মীপুরের বাগদি বা বুনো পরিবারের স্বর্গীয় নেংটোর স্ত্রী আভারানীর কাছে গিয়ে কাঠব্যবসায়ী আমিনুলকে পূর্বে হেনস্থাও হতে হয়েছে। কিছু যুবক পূর্বে ধরে অর্থও আদায় করেছে বলে গুঞ্জন আছে। তাদেরই কেউ কি অর্থের লোভে হত্যাকা- ঘটিয়ে উদোর পি-ি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চক্রান্তও হতে পারে। তাছাড়া ১৩ ডিসেম্বর যেহেতু আমিনুল ইসলাম কাঠ বিক্রির জন্য বাড়ি থেকে ঝিনাইদহের উদ্দেশে রওনা হন। সেখান থেকে তিনি কতো টাকা নিয়ে ফিরছিলেন সেটাও যেমন খতিয়ে দেখা দরকার, তেমনই সরোজগঞ্জ থেকে রায়লক্ষ্মীপুর বাগানপাড়ার মহিদুলের আলমসাধুযোগে ফিরে কেনই বা আইলহাস বাজারের অদূরবর্তী খাসকররা ভূমি অফিসের নিকট নেমেছিলেন? গলিত লাশ উদ্ধারের পর এ প্রশ্নও এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

পুলিশ অবশ্য বলেছে, ১৩ ডিসেম্বর সকালে আইলহাসের কাঠব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম (৫৭) বাড়ি থেকে ঝিনাইদহের উদ্দেশে বের হলেন। সন্ধ্যায় সরোজগঞ্জ হয়ে ফেরেন। কথা বলেন আভারানীর সাথে। মোবাইলফোন ট্রাকিং করে সেটাই পাওয়া গেছে। তারই ভিত্তিতে আভারানীকে গ্রেফতার করা হয়। লাশ উদ্ধারের একদিন আগেই আভারানী তার মেটে ঘর যেভাবে নেপে মুছে পরিষ্কার করেছে তা দেখেও পুলিশের সন্দেহ হওয়া অমূলক নয়। তবে শুধু আভারানী নয়, অন্যদিকেও পুলিশ নজর দিচ্ছে। চোখ কান খুলেই তদন্ত করে প্রকৃত হত্যাকারীকে ধরে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।