অনেক চাষিই জানেন না তাদের ওয়ার্ডের দায়িত্বরত কৃষি অফিসার কে!

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মাঠের বোর ধানে মহামারি হারে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন মাঠে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে শীষমুখি শ শ বিঘা বোরো ধান ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কষ্টার্জিত ধানের ক্ষয়ক্ষতিতে হয়ে পড়েছে দিশেহারা। কৃষি কর্মকর্তারা প্রকৃতির ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে চাপিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বেশিরভাগ কৃষকেরা এলাকার দায়িত্বরত কৃষি অফিসারদের চেনে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষিক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যখন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঠিক তখনি কৃষি অফিসারদের অনুপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় গতকাল শনিবার বোরোধানে মহামারি আকারে লেগেছে ব্লাস্ট এমন সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সকালেই কর্মকর্তারা জেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ধানের জমি সরেজমিনে দেখতে যান।

সরেজমিনে জানা যায়, বোরো মরসুমে অধিকাংশ চাষিরা পরিবারের সদস্যদের বার্ষিক খাবারের বন্দোবস্ত করার জন্য কম বেশি ধান চাষ করে থাকেন। চলতি বোরো মরসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে চাষিরা বোরধানের চাষ করেছেন। চলতি মাসের মধ্যে রোপণকৃত ধান ঘরে ওঠার কথা কৃষকদের। হঠাৎ করে ছত্রাক জাতীয় নেক ব্লাস্ট রোগের সংক্রামণে জেলার শ শ বিঘা জমির ধানের থোড় (শীষ) শুকিয়ে যাচ্ছে। সকালে ধানের জমি একরকম দেখা গেলে বিকালে দেখা যাচ্ছে আরেক রকম। কাছে না গেলে দুর থেকে দেখে মনে হচ্ছে ধান সব পেকে গেছে। নিকটে গিয়ে ধানের শীষ হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখা গেছে ধান সব চিটা হয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের ধানচাষি সামসুল, শরিফ, মনি, হামিদ, নাসির, আওয়াল, জাহিদুল, রবিউল, ইকুল, ফজলু কুন্দিপুর গ্রামের মানিক, কাদের, ফারুক, জাহাঙ্গীর, আমিরসহ শত শত চাষি বললেন, বোর মোরসুমে ধানচাষ করি পরিবারের বছরের খাদ্য মওজুদ করার জন্য। আর এ ধান চাষ করতে গিয়ে ঋণ এবং মহাজনদের নিকট দেনা দায়িকও হয়েছে। বর্তমানে ধানের যে অবস্থা হয়েছে টাকা খরচ করে বিচালি কাটার অবস্থা নেই। কারণ এ বিচালি গরুতে খাবে না বা বিক্রি হবে না। এখন পয়সা খরচ করে চমি পরিষ্কার করা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। দূর থেকে খিচুই বোঝার উপায় নেই। ধানের জমিতে গিয়ে দেখি শীষের নিচের অংশে কালো হয়ে পচে গেছে। আর ওপরের শীষ শুকিয়ে গেছে। সম্পূর্ণ শীষ চিটে হয়ে গেছে। ধান না হওয়ায় আমরা মাঠে মারা যাবো। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, এমন পরিস্থিতি হবে এটা আমাদের জানাছিলো না। শুনেছি কয়েকটি ওয়ার্ড মিলে নাকি একজন করে কৃষি অফিসার নিয়োগ আছে। কে আমাদের কৃষি অফিসার বলতেই পারব না। কৃষি অফিসারকে যেমন আমরা চিনি না, তেমনি অফিসারও আমাদেরকে চেন না। চাষিরা অভিযোগ করে আরও বলেন, বেগমপুর ও তিতুদহ ইউনিয়নে যে সমস্ত কৃষি অফিসাররা আছেন তার বাড়িতে বসে চাকরি করেন। কারণ কর্মস্থল থেকে বাড়ি খুবই নিকটে। আবার অনেকেই যুগ যুগ ধরে সামান্য একটু ডানে বায়ে করে একই জায়গায় চাকরি করে যাচ্ছেন।  তাই কর্মস্থল এবং বাড়ি একই জায়গায় হওয়ায় বেশির ভাগ সময় তরা চাকরির সুবাদে নিজের কাজ করতে দেখা যায়। বিষয়টি উর্দ্ধতম কর্মকর্তরা জানলেও অজ্ঞাত কারণে নিরব থাকে। এদিকে অফিস বন্ধ থাকার কারণে জেলাতে কি পরিমান ধানক্ষেত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে তার সঠিক তথ্য জানাগে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, বেগমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। হঠাৎ তাপমাত্রার তারতম্যে কারণে এমনটি ঘটেছে। বিশেষ করে ২৮ জাতের বোরোধানে ছত্রাকজনিত নেক ব্লাস্ট সংক্রামণ এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষি অফিসারদের বিরুদ্ধে চাষিদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, চাষিদের সকল কথা সঠিক না। আর একজন কৃষি অফিসারের পক্ষে এতো চাষি চেনা বা জানা সম্ভব না। তারপরও বলব কৃষকদের এ ক্ষতিতে আমরা ব্যাথিত। আক্রান্ত না হওয়া ধানক্ষেত যাতে নতুন করে আক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে পরামর্শ এবং করণিয় বিষয়ে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পরিশেষে বলব আসলে প্রকৃতির ওপর আমাদের কাহারো হাত নেই। এ সময় তার সাথে ছিলেন জেলা  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক (এডিডি) মহিউদ্দীন।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নির্মল কুমার দে জানান, জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাতে এ রোগ বেশি দেখা দিয়েছে। তবে জেলার ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে একটু সময় লাগবে। পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য কি করা যায় সেটিও ভাবা হচ্ছে।