অটোর সাথে ধাক্কা : ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মুদি দোকানির মর্মান্তিক মৃত্যু

দামুড়হুদাচুয়াডাঙ্গা সড়কের ফকিরপাড়া মোড়ে ইটভর্তি ট্রাকের ওভারটেক করতে গিয়ে বিপত্তি

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদায় ইটভর্তি চলন্ত ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ওসমান হারুন লাল্টু (৩৭) নামের এক মুদি দোকানি নিহত হয়েছেন। তিনি দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গুচ্ছগ্রামের মৃত শের আলীর ছেলে। মুদি দোকানি নাটু গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে দামুড়হুদা থেকে মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গায় যাচ্ছিলেন। তিনি দামুড়হুদা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ফকিরপাড়া মোড়ে পৌঁছে ইটভর্তি চলন্ত ট্রাককে অতিক্রম করার চেষ্টা করেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা অটোর সাথে ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং চলন্ত ট্রাকের চাকার নীচে ছিটকে পড়েন  মুদি দোকানি নাটু। ফলে ওই চলন্ত ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফাঁয়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং ট্রাকের নীচে আটকে থাকা মরদেহ উদ্ধারের আপ্রাণ চালিয়ে ব্যর্থ হন। প্রায় পৌনে একঘণ্টা পর ট্রাক থেকে ইট নামিয়ে মরদেহ বের করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুর্ঘটার পরপরই নিহতের চাচা জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ সনাক্ত করেন। নাটু পার্সপোর্ট আনতে দামুড়হুদা থেকে  চুয়াডাঙ্গায় যাচ্ছিলো বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, দামুড়হুদার উজিরপুরস্থ বাদশা ব্রিক্স থেকে ইট লোড করে (চুয়াডাঙ্গা-ট-১১-০৪৩৮) নং দশ চাকার ট্রাকটি চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে যাচ্ছিলো। এ সময় মোটরসাইকেলচালক নাটু ওই ট্রাকটি অতক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ইজিবাইকের সাথে ধাক্কা লাগার সাথে সাথে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং ওই ইটভর্তি চলন্ত ট্রাকের চাকার নীচে ছিটকে পড়েন। ট্রাকচালক কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হন মোটরসাইকেল চালক নাটু। ৫-৭ মিনিট পর মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন তিনি। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফাঁয়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং ট্রাকের নীচে আটকে থাকা মরদেহ করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বেশকিছুক্ষণ যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়কের উভয় দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়। শেষমেষ দামুড়হুদা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক বলেছেন, লাশ উদ্ধারের পর সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক ট্রাক চালককে এখনও পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত মামলা হয়নি। নিহত নাটুর লাশ নিজ বাড়িতে পৌছুলে স্ত্রী আদুরী এবং শিশু দু সন্তানসহ স্বজনদের কাঁন্না আর আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। পরিবারে নেমে আসে শোকের মাতম। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিহতের লাশের জানাজার নামাজ শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। দু সন্তানের জনক নিহত মুদি দোকানি নাটু ছিলেন দু ভাইয়ের মধ্যে ছোট। নিহতের স্ত্রী আদুরী খাতুন বলেছেন, ভারতে যাওয়ার জন্য কিছুদিন আগে চুয়াডাঙ্গায় পাসপোর্ট করতে দিয়েছিলেন। দুপুর ১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলে গেলেন চুয়াডাঙ্গা যাবো। পাসপোর্ট নেবো এবং কিছু মালামাল কিনেই চলে আসবো।

এদিকে দুর্ঘটনার স্থান নিয়ে দামুড়হুদা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ পড়েন গোলকধাধায়। অনেক হিসেব-নিকেশ শেষে দুর্ঘটনার স্থানটি সদর থানার আওতাভুক্ত হওয়ায় শেষমেষ সদর থানা পুলিশই লাশ হেফাজতে নিয়ে সূরহাতালসহ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন।