সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের মারধর : উভয়পক্ষের ৭ জন আহত

স্টাফ রিপোর্টার: ৪২তম জাতীয় আন্তঃস্কুল-মাদরাসা গ্রীষ্মকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের উগ্র আচরণে লণ্ডভণ্ড পরিবেশ। আন্তঃস্কুল-মাদরাসা ফুটবলের ফাইনালে সরোজঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হলেও এ বিদ্যালয়ের খেলোয়াড়, সমর্থক ও কর্মকর্তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা ও জীবননাশের হুমকির মুখে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের তিন ভ্যান পুলিশ ফোর্স ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল অমিনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও বহিরাগত খেলোয়াড় উগ্র মনোভাব, বেধড়ক মারধর ও এলোপাতাড়ি পেটানোর কারণে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে আন্তঃস্কুল মাদরাসার সকল প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়েছেন সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিকভাবক, সমর্থক ও প্রত্যক্ষদর্শী শান্তিপ্রিয় ফুটবল দর্শকরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, খেলায় জিততে না পেরে খেলা চলাকালীন সময়ে ভি.জে স্কুলের খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষকে অহেতুক আক্রমণ করতে থাকে। এরপর খেলার শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে ভি.জে স্কুলের খেলোয়াড়রা চড়াও হয়ে পেটাতে থাকে সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলোয়াড়, সমর্থক ও কর্মকর্তাদের। ফলে উভয় পক্ষের ৭ জন আহত হয় বলে জানা গেছে।

সরোজগঞ্জের আহতরা হলেন খেলোয়াড় মিল্লাত হোসেন, তাহমিদ হাসান, রাকিবুল হাসান ও খেলোয়াড়দের রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন শিক্ষক মাসুদ করিম, গোলজার হোসেন ও খাইরুল ইসলাম এবং ভি.জে স্কুলের পক্ষে একজন খেলোয়াড় আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল ৪টায় চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পর্যায়ের ফুটবলের ফাইনালে মুখোমুখি হয় সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। প্রথমার্ধের ২১ মিনিটের মাথায় সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর জার্সি পরিহিত খেলোয়াড় গোল দিয়ে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ভি.জে স্কুল গোল পরিশোধের জন্য প্রাণপন চেষ্টা করতে থাকে। ভি.জে স্কুলের খেলোয়াড়রা একাধিক সুযোগ পেয়েও শেষ রক্ষা করতে না পারায় সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দেরকে খেলা চলাকালীন সময়েই অহেতুক আক্রমণ ও গালাগালি করতে থাকে। রেফারি একাধিক খেলোয়াড়কে কার্ডও প্রদর্শন করে। ভি.জে স্কুল একের পর এক ব্যর্থ হয়ে ফাউলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এ সময় খেলার মাঠে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়ে খেলা বন্ধ থাকে। খেলা পরিচালনা কমিটি পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সদস্যদের মাঠে আহ্বান জানান। পুলিশ সদস্যরা মাঠেও আসেন। কিন্তু খেলার শেষ বাঁশি বেজে ওঠার সাথে সাথে ভি.জে স্কুলের খেলোয়াড়রা আক্রমণ করে সরোজগঞ্জের খেলোয়াড়, সমর্থক ও কর্মকর্তাদের ওপর। পুলিশ সদস্য ও মাঠে উপস্থিত জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা ও জেলা টিমের ফুটবল খেলোয়াড়দের সামনেই বেধড়ক পেটাতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা ফুটবল দলের সোহেল, হ্যাজি, সুমন, মালেকসহ কয়েকজন খেলোয়াড় ভি.জে স্কুলের ছেলেদের ওপর চড়াও হয়ে তাদেরকে স্টেডিয়ামের বাইরে বের করে দিতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে মাঠে হাজির হয়ে আরো তিন ভ্যান পুলিশ সদস্য মাঠে আহ্বান করেন। এ সময় স্টেডিয়ামের ভেতরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও বাইরে চলতে থাকে বিক্ষিপ্ত মারামারি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইক্রোফোনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ মারামারি বা হট্টগোল করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় নির্বাহী কর্মকর্তা ভি.জে স্কুলের সকল খেলোয়াড়, সমর্থক ও কর্মকর্তাদের মাঠ ত্যাগের নির্দেশ দেন। তারা মাঠ ত্যাগ করলে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার গ্রহণের পূর্বে সরোজগঞ্জের শিক্ষকগণ কান্নাজড়িত কণ্ঠে নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন জানান এ অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে আমরা পুরস্কার বর্জন করবো। নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্বাসে সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় পুরস্কার গ্রহণ করে।

উপজেলা পর্যায়ে বালক হ্যান্ডবলে নীলমণিগঞ্জ, বালক কাবাডিতে চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাস, বালিকা কাবাডি ও হ্যান্ডবলে আলুকদিয়া রোমেলা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও মেয়েদের ফুটবলে খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান মামুন-অর-রশীদ আঙ্গুর, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লাড্ডু, এমএ বারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক একেএম আলী আকতার, হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান প্রমুখ।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা একাডেমী স্কুল কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক ও সচেতন মহল অভিযোগ তুলে বলেন, সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাথে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে চুয়াডাঙ্গা একাডেমিকে চার বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো স্টান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা থেকে। আর এতো বড় অখেলোয়াড় সুলভ উগ্রআচরণ মারামারির কারণে কেন ভি.জে স্কুলকে নিষিদ্ধ করা হবে না। নিষিদ্ধ না করা না হলে শান্তিপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেবে।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, দল হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখে ভি.জে স্কুলের শরীরচর্চা শিক্ষক জাহিদ মাঠের বাইরে থেকে ভি.জে স্কুলের ছেলেদেরকে লিড দিয়ে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে উৎসাহিত করেন। তবে জাহিদ তার খোড়া যুক্তিতে বলেন, বাইরের ছেলেরা হট্টগোল বাধিয়েছে। আমার ছেলেরা দায়ী নয়।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন বলেন, আমি ঘটনা সব শুনেছি ও জেনেছি। উভয় স্কুলকে ডাকা হবে এবং তদন্ত করে দোষী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ শাস্তি প্রদান করা হবে।