শততম টেস্টে টাইগারদের অবিস্মরণীয় বিজয়

টেস্টে বাংলাদেশের নবম জয় : ব্যাটিং বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে একসাথে নৈপুণ্য প্রদর্শন

 

স্টাফ রিপোর্টার: ড্রেসিংরুমে সবাই দাঁড়িয়ে গেছেন। টেলিভিশনের সামনে কোটি কোটি মানুষ শিহরিত। রঙ্গনা হেরাথের বলটা সুইপ করেই চিত্কার করে দৌড় শুরু করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চিত্কার করতে করতে, উল্লাস করতে করতে দৌড়ালেন মুশফিক। উল্লাস করছেন মিরাজ, উল্লাস করছেন মুশফিক, উল্লাস করছেন দলের সব খেলোয়াড়; উল্লাস করছে সারা বাংলাদেশ। এ কেবলই উল্লাসে মাতার দিন, এ কেবলই উত্সবে মাতার দিন। এ এক স্বপ্নের দিন।

হ্যা, বাংলাদেশকে আরও একবার স্বপ্নের সাগরে ভাসিয়ে সেই সাগরের ওপারের কলম্বো নগরীতে টেস্ট জয়ের উত্সবে মাতল জাতীয় ক্রিকেট দল। নিজেদের ইতিহাসের শততম ম্যাচে পাঁচ দিন ধরে নাটক আর প্রতাপের পর তামিম ইকবালদের কল্যাণে কলম্বোতে এলো ৪ উইকেটের এক জয়। সমুদ্রপাড়ে রচিত হলো নতুন এক ইতিহাস। উদিত হলো নতুন এক সূর্য। শ্রীলঙ্কার মাটিতে জয় বাংলা কাপ হাতছাড়া হতে দিলো না বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচ প্রথম দিন থেকেই নিয়ন্ত্রণে ছিলো বাংলাদেশের। গতকাল শেষ দিনের সকালে শ্রীলঙ্কার অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান চোখ রাঙানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বেড়ে উঠতে দেননি বাংলাদেশি বোলাররা। প্রবল সংগ্রামের পরও শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ৩১৯ রানে। প্রথম ইনিংসে ১২৯ রানের লিড থাকায় বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯১ রান। দলীয় ২২ রানে পরপর দুই উইকেটের পতনে একটু দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানের ১০৯ রানের জুটি বাংলাদেশকে জয়ের কাছাকাছি এনে দেয়। তামিম ১২৫ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে জয়ের কয়েক কদম দূরে রেখে আউট হয়ে যান। তার এই ইনিংসই যে দলকে জয় এনে দিয়েছে, সে স্বীকৃতিও পেয়েছেন ম্যাচসেরা হয়ে। এরপর সাব্বিরও ৪১ রানে ফিরে যান। সাকিব ১৫ রান করে ভুতুড়ে এক আউটের শিকার হন। বাকিটা পথ হেসেখেলে পাড়ি দেন মুশফিক ও মোসাদ্দেক। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে মোসাদ্দেক আউট হওয়ায় উত্সবটা একটু রং হারিয়েছিলো। তবে এই ধাক্কাকে বুঝতেই দেননি এরপরই উইকেটে আসা মিরাজ। এক বাউন্ডারিতে আনন্দে ভাসান দেশকে। কলম্বোতে এই টেস্ট জয় বাংলাদেশের নবম জয় এবং দেশের বাইরে চতুর্থ জয়। তবে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় এই জয়কে অন্তত বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় স্থানে ঠাঁই দিতে হবে। বাংলাদেশ গত বছরের আগ পর্যন্ত ৭টি টেস্ট জিতেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি দ্বিতীয় সারির দল ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম জয়টি আসে গত বছরের শেষ দিকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। মিরপুরে তিন দিনের ভেতর মুশফিকরা হারিয়ে দেন তাদের। এরপর বাংলাদেশের সামনে একটা বড় প্রশ্ন দাঁড়ায়, দেশের বাইরেও কী এমন বড় দলের বিপক্ষে জেতার সামর্থ রাখে বাংলাদেশ? এমনকি অনেক বিশেষজ্ঞ বলছিলেন, দেশের বাইরে না জেতা পর্যন্ত বাংলাদেশকে বড় দল বলা যায় না। অবশেষে সেই চ্যালেঞ্জটা নিলো বাংলাদেশ শততম টেস্টে এসে। এই টেস্টের আগে একটা গুমোট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো। একাদশে কিছু পরিবর্তন, খেলোয়াড়দের সাথে ম্যানেজমেন্টের সম্পর্ক; এসব নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিলো। সব প্রশ্ন উড়িয়ে দিলেন এই খেলোয়াড়রা। এই জয় এমন এক জয়, যেখানে কাকে রেখে কার প্রশংসা করবেন, বলা কঠিন। জুরিরা ম্যাচসেরা হিসেবে বেছে নিলেন তামিম ইকবালকে। প্রথম ইনিংসে ৪৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রান করে পুরস্কারটা পেলেন। কিন্তু তামিম সেটা তুলে দিলেন সেঞ্চুরি করা ও ৪ উইকেট নেয়া সাকিবের হাতে! ম্যাচ শেষে টেন ক্রিকেটের সাথে আলোচনায় সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রাসেল আর্নল্ড জানালেন তামিমের এই সৌজন্যবোধের কথা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয়ে শেষ দিনে ৮২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন তামিম। শেষের লড়াইয়ের জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকার কারণেই হয়তো ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় বেছে নেয়া হয়েছে তাকে। সাকিব-তামিমের পুরস্কার বিনিময়ই বলে দিলো, কেমন বাংলাদেশের জয়ের প্রাপ্তি। এই এক জয় যেন আরও বেশি একদল করে তুললো বাংলাদেশকে। আরও স্বপ্নের পথ দেখালো দলকে। স্বপ্নের পথে চলা শুরু হোক এখানেই। সংক্ষিপ্ত: শ্রীলঙ্কা :৩৩৮ ও ৩১৯, বাংলাদেশ: ৪৬৭ ও ১৯১/৬। ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল টেস্টে দেশের বাইরে সবচেয়ে বড় বিজয়।