মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে খেলাধুলার বিকল্প নেই

 

বাংলাদেশ ফুটবলের নেতৃত্ব দিতে মুজিবনগর কমপ্লেক্সে স্টেডিয়াম চাই!

মহাসিন আলী/শেখ শফি: মেহেরপুরের মুজিবননগর স্বাধীনতার সূঁতিকাগার। দেশ স্বাধীনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় মুজিবনগর সরকার। তাই দেশের প্রথম ও অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগর। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিবনগরে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। তবে এখানে করা হয়নি কোনো স্টেডিয়াম। মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় খেলাধুলায় বিশেষ করে বাংলাদেশের ফুটবলে নেতৃত্ব দিতে চায় মুজিবনগরের শিশু-কিশোররা।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর মুজিবনগরকে উপজেলা ঘোষণা ও মুজিবনগর কমপ্লেক্সের বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নের জন্য ৫শ কোটি টাকার কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। কমপ্লেক্সে জমির পরিমাণ ৮০ একর। ১০৫ বিঘা জমির ওপর প্রায় সাড়ে ১১শটি আম গাছের ঐতিহাসিক বিশাল আম্রকানন সংলগ্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে-মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ স্থানে স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকেন্দ্র, স্মৃতিকেন্দ্রের বাইরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের মূর্তিসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মূর্তি, ৬ দফা ভিত্তিক ৬ স্তর বিশিষ্ট গোলাপ বাগান, বঙ্গবন্ধু তোরণ, পর্যটন মোটেল, প্রশাসনিক ভবন, টেনিস মাঠ, গাড়ি পার্কিঙের স্থান, শেখ হাসিনা মঞ্চ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, স্বাধীনতা ক্লাব ও পাঠাগার, ডাকঘর, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, শিশুপল্লি, শপিং মল, আধুনিক মানের মসজিদ, হেলিপ্যাডসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়াও কমপ্লেক্সর বাইরে উপজেলা পরিষদ, পিকনিক কর্ণার ও মুজিবনগর থানা করা হয়েছে। কিন্তু করা হয়নি কোনো স্টেডিয়াম বা খেলার মাঠ।

মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে খেলাধুলার বিকল্প নেই। ভারত সীমান্তবর্তী স্থান মুজিবনগর। এ স্থানে একটি খেলার মাঠ তথা স্টেডিয়াম এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। কমপ্লেক্সের মধ্যে একটি টেনিস মাঠ থাকলেও তা ব্যবহার হয় না। দীর্ঘসময় ধরে টেনিস গ্রাউন্ডের দরজায় তালা মারা রয়েছে। তালায় ধরেছে মরিচা। অথচ জনপ্রিয় খেলা ফুটবল কিংবা ক্রিকেটের জন্য এখানে নেই কোনো স্টেডিয়াম।

মুজিবনগর কমপ্লেক্স মসজিদের পশ্চিম পাশে রাস্তা সংলগ্ন সামন্য জায়গায় শিশু-কিশোরদের ফুটবল খেলা দেখে আনন্দ ভ্রমণকরী, শিক্ষা সফরকারী কিংবা বিনোদন পিপাসু মানুষ থমকে দাঁড়ায়। কতো সুন্দর ফুটবল খেলছে মুজিবনগরের শিশু-কিশোররা। খেলার ছবি তুলতেই তারা বুঝে নিলো সাংবাদিক।

মুজিবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তুফানের (ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন) নেতৃত্বে তাছিন, আহাদ, রাব্বি, অন্তর, আসিফ, বায়োজিত, আজিজুল, শাকিল, রাফিউল, রাকিব, পারভেজ, সম্রাট (সহঅধিনায়ক), অপু, আকরাম, রুবেল, মনির, মাহিন, ছাব্বির, পারভেজসহ এলাকার শিশু-কিশোররা প্রতিদিন বিকেলে এখানে খেলা করে। এদের সকলের বয়স ১১ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। তারা জানায়, মুজিবনগরে কোনো খেলার মাঠ না থাকায় খেলাধুলায় অসুবিধা হয়। অনেক সময় এসব স্থানে পাট শুকানো হয়। তখন তারা খেলতে পারে না। কখনো বিজিবি-বিএসএফ প্রীতি ভলিবল কিংবা হ্যান্ডবল খেলা হলে দীর্ঘদিন তাদের খেলা বঞ্চিত হতে হয়। তারা আরো জানায়, সরকারি কোনো উদ্যোগ এখানে না থাকায় তারা নিজেদের মতো করে এখানে ফুটবল খেলে। ইচ্ছা থাকলেও স্থান সংকুলানের অভাবে ক্রিকেট খেলতে পারে না।

তারা আরো জানায়, তারা এলাকার বিভিন্ন ক্লাবের ফুটবল খেলা ধরে। সম্প্রতি তারা উপজেলার ভবানীপুর, আনন্দবাস ও শিবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ফুটবল খেলে সাফল্য বয়ে এনেছে। তার পরও এতোদিনে খেলায় তাদের অভিভাবক ছিলো না। সম্প্রতি মুজিবনগর শাপলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের দিকে এগিয়ে এসেছে। সংগঠনটির সভাপতি মুন্সি ওমর ফারুক প্রিন্স তাদের খেলার সামগ্রী কিনে দিতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একই সাথে মুজিবনগর শিশু পরিবারের কর্মচারী চাঁদ আলী ফুটবলে আপাতত রেফারির দয়িত্ব পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

মুজিবনগর শাপলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সভাপতি মুন্সি ওমর ফারুক প্রিন্স বলেন, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে খেলাধুলার বিকল্প নেই। মুজিবনগর সীমান্ত এলাকা। এ এলাকায় সহসা হাতের কাছে মাদক পাওয়া যায়। আমাদের আগামী প্রজন্মকে মাদকমুক্ত রাখতে তাদের লেখাপাড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় মনোনীবেশ করে রাখতে হবে। এলাকার সচেতনমহল মনে করেন-মুজিবনগরে একটি স্টেডিয়াম বা খেলার মাঠ খুবই জরুরি। এলাকাবাসী খুব সত্ত্বর এ বিষয়ে মুজিবনগরে একটি মানববন্ধনও করবে।

মুজিবনগর শিশু-কিশোর ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন তুফান জানায়, আমরা মাদককে না বলেছি। এজন্য শপথ নিয়েছি। সে আরো জানায়, মুজিবনগের একটা স্টেডিয়াম বা খেলার মাঠ থাকলে আমরা এ এলাকার শিশু-কিশোররা ফুটবল বিশ্বের জন্য নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম।

মেহেরপুর-১ (মেহেরপুর-মুজিবনগর) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলাধুলার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্টেডিয়াম করার ঘোষণা দিয়েছেন। মুজিবনগর কমপ্লেক্সের কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। আশা করা যায়- আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তা শেষ করা সম্ভব হবে। মেহেরপুরে জায়গা পেলে একটি আধুনিক মানের স্টেডিয়াম ও একটি মিনি স্টেডিয়াম করা পরিকল্পনা আছে। জায়গা পেতে কথাবার্তা চলছে। আশা করা যায় খেলার মানোন্নয়ে আমরা এ কাজটা দ্রুত সারতে পারব। কমপ্লেক্স সংলগ্ন মুজিবনগরে স্টেডিয়াম ও শিশুপার্কসহ আরো কয়েকটি স্থাপনা করার পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের আছে। আগামী সংসদ অধিবেশনে আমি এ বিষয়ে একটি দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব উত্থাপন করবো।