ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন দুমড়ে-মুচড়ে ফাইনালে উঠল জার্মানি

ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েফাইনালে উঠল জার্মানি। তা এমনইভাবে যে, হা-হুতাশ করারও সুযোগ থাকলো নাস্বাগতিক দেশটির ২০ কোটি মানুষ আর বিশ্বজুড়ে কোটি-কোটি সমর্থকদের। ২৯মিনিটের মধ্যেই অবিশ্বাস ভরে সবাই দেখলো ব্রাজিলের জালে পাঁচ পাঁচটি গোল।শেষ বাঁশি বাজার সময় স্কোর জার্মানি ৭-১ ব্রাজিল!

২৩ থেকে ২৯, এই ছয় মিনিটে চার গোলে স্বপ্ন ভেঙে যায় ‘সেলেসাও’দের।কোনোরকম প্রতিরোধ গড়তে পারেনি পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। অধিনায়ক চিয়াগোসিলভার অনুপস্থিতিতে ব্রাজিলের রক্ষণ নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলায় মেতে উঠেতিনবারের চ্যাম্পিয়নরা।

জোড়া গোল করেন টনি ক্রুস ও আন্দ্রে শুরলে।রেকর্ড গড়া গোল পান মিরোস্লাভ ক্লোসা। বিশ্বকাপে পঞ্চম গোলটি করেন টমাসমুলার। জার্মানির অন্য গোলটি সামি খেদিরার। ব্রাজিলের সান্ত্বনার গোলটিঅস্কারের।

নেইমার নেই; কিন্তু ব্রাজিলের খেলোয়াড় আর স্টেডিয়ামভর্তি সমর্থকরা ঠিকইনিয়ে এসেছিল তাকে – ব্যানারে, প্ল্যাকার্ডে, ছবিতে, জার্সিতে। জাতীয় সঙ্গীতগাওয়ার সময় দাভিদ লুইস আর গোলরক্ষক জুলিও সেজার ধরে রেখেছিলেন নেইমারের ১০নম্বর জার্সি। সাও পাওলোতে বিছানায় শুয়ে থাকা নেইমারের জন্য শিরোপা আনতেচেয়েছিল তারা। নেইমারকেই এখন সান্ত্বনা যোগাতে হবে সতীর্থদেরকে।

ব্রাজিলের জালে প্রথম গোলটি মুলারের। জার্মানির প্রথম কর্নারকেই গোলে পরিণতকরেন তিনি। ১১তম মিনিটে ডানদিক থেকে ক্রুসের কর্নার সোজা মুলারের পায়ে এসেপড়ে। অরক্ষিত এই ফরোয়ার্ড বলে জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি। এই বিশ্বকাপেএটা জার্মান ফরোয়ার্ডের এটি পঞ্চম গোল। গত বিশ্বকাপেও পাঁচটি গোল করেছিলেনতিনি।

 

 

মুলারের গোলের পর ‘কে’ আদ্যাক্ষরের জার্মান খেলোয়াড়রা নামলেন গোল উৎসবে।২৩তম মিনিটে ক্লোসার রেকর্ড গড়া গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে জার্মানি। ডিবক্সের ভেতর থেকে ক্লোসার প্রথম চেষ্টাটি ফিরিয়ে দেন জুলিও সেজার। কিন্তুফিরতি শট আর ফেরাতে পারেননি তিনি।পরের মিনিটে মেসুত ওজিল বল দেন ফিলিপ লামকে। তিনি বল বাড়ান মুলারের দিকে।কিন্তু পা ছোঁয়াতে পারেননি বায়ার্ন মিউনিখের এই তারকা। বল পেয়ে যান ফাঁকায়দাঁড়ানো ক্রুস। বাঁ বার ঘেঁষে তার বাঁ পায়ের শট জালে জড়ালে নীরবতা নেমে আসেস্টেডিয়ামে।২৬তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যান ক্রুস। ফের্নান্দিনিয়োর মারাত্মক ভুলেবল পেয়ে তিনি পাস দেন খেদিরাকে। রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার বল ফিরিয়ে দেনক্রুসকে। এগিয়ে আসা সেজারকে পরাস্ত করতে বায়ার্ন মিউনিখ তারকার কোনো সমস্যাহয়নি।

স্টেডিয়ামে থাকা ব্রাজিল সমর্থকরা এ সময় নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি। অনেককেই এসময় কাঁদতে দেখা যায়।

২৯তম মিনিটে আবার গোল। এবার নিজেদের অর্ধে বল হারানোর মাসুল দেয় ব্রাজিল।ওজিলের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে ডি বক্সে ঢুকে ব্যবধান ৫-০ করে ফেলেন খেদিরা। ছয়মিনিটেই হলো ৪ গোল!

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে বেশ কয়েকটি আক্রমণশানায় ব্রাজিল। কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ান জার্মান গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার। ৫০তমমিনিটে রামিরেসের শট ফিরিয়ে স্বাগতিকদের হতাশ করেন তিনি। পরের মিনিটেআবারো জার্মানির ত্রাতা এই গোলরক্ষক। অস্কার শট জালে পৌঁছায়নি তার দৃঢ়তায়।

দুই মিনিট পর আবারো ব্রাজিলকে হতাশ করেন নয়ার। ডি বক্স থেকে পাউলিনিয়োর শট ফিরিয়ে দেন তিনি। ফিরতি শটও ফেরান অসাধারণ দক্ষতায়।

৬৯তম মিনিটে ব্রাজিলের নড়বড়ে রক্ষণের সুযোগে গোলদাতাদের তালিকায় নাম তুলেফেলেন দ্বিতীয়র্ধের বদলি হিসেবে নামা শুরলে। ডি বক্সে লামের ক্রস থেকেসেজারকে পরাস্ত করেন তিনি। ষষ্ঠবারের মতো নিজেদের জাল থেকে বল কুড়িয়ে আনতেহয় ব্রাজিলকে।৭৯তম মিনিটে ব্রাজিলকে আরো বড় লজ্জায় ডুবান শুরলে। বাঁ দিক থেকে ব্রাজিলেরডি বক্সে ঢুকে চেলসি ফরোয়ার্ডের নেয়া শট থেকে বল ক্রসবারের লেগে জালে জড়ায়।স্কোরলাইন তখন ৭-০।

একের পর এক গোলে স্টেডিয়ামেই কান্নায় ভেঙেপড়েন অনেক দর্শক। বেশিরভাগই অবশ্য তখন অধিক শোকে পাথর। এরপর ব্রাজিলেরআক্রমণের সময় দুয়ো দেবেন, না উৎসাহ যোগাবেন বুঝতে পারছিলেন না তারা।

অবশেষে নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে নয়ারকে পরাস্ত করেন অস্কার। মাঝমাঠ থেকেদৌড়ে এসে করা স্বান্ত্বনার এই গোল উদযাপনও করেনি লজ্জাজনক হারে বিশ্বকাপথেকে বিদায় নেয়া দলটি।

দুই হলুদ কার্ডের কারণে খেলতে না পারাঅধিনায়ক চিয়াগো সিলভার অভাবটা ভালোই বোঝা গেছে। রক্ষণে দাভিদ লুইস, মাইকন, মার্সেলো, দান্তেদের মধ্যে ছিল না কোনো সমন্বয়। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডাররাওছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ।

পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে বিশ্বকাপে কখনো এতোবার নিজেদের জাল থেকে বল কুড়িয়ে আনতে হয়নি।

বিশ্বকাপে এর আগে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার ছিল ১৯৯৮ সালে ফাইনালে, ফ্রান্সের বিপক্ষে (৩-০)।

সব মিলিয়ে ১৯২০ সালে উরুগুয়ের কাছে ৬-০ গোলের হার ছিল ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার।

বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে সবচেয়ে বড় জয়টি এখন জার্মানির। প্রথম আসরেইআর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে দু’টি সেমি-ফাইনালে প্রতিপক্ষকে ৬-১ ব্যবধানেহারিয়েছিল। আর ১৯৫৪ সালে পশ্চিম জার্মানি একই ব্যবধানে হারিয়েছিলঅস্ট্রিয়াকে।