বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লেন মাশরাফিরা

স্টাফ রিপোর্টার: মা-বাবা বিদায় দিতে এসেছেন তাসকিন আহমেদকে। হয়তো ঠিক প্রথম দিন যেভাবে স্কুলে দিয়ে এসেছিলেন আদরের ছোট্ট সন্তানকে। সেই তাসকিন এখন অনেক বড়, খেলতে যাচ্ছেন বিশ্বকাপ। তাঁকে বিমানবন্দরে বিদায় জানিয়ে এলেন অভিভাবকরা। আশীর্বাদে, ভালোবাসায়। এসেছিলেন মুশফিকুর রহিম, এনামুল হকদের মা-বাবা; মাশরাফি বিন মর্তুজার বাবা। জাতীয় দলের অধিনায়কের কোলে তাঁর আদরের মেয়ে হুমায়রা। ভাই-বোন এসেছেন নাসির হোসেনকে বিদায় দিতে। মাশরাফি-মুশফিকদের স্ত্রীরা বিমানবন্দরে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ও নাঈমুর রহমানও উপস্থিত সেখানে। আর সারা গায়ে রং মেখে ডোরাকাটা বাঘ সেজে হাজির শোয়েব আলীও। তাঁর হাতে পতপত করে উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা।

ওই লাল-সবুজের নিশান আরো ওপরে ওড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাল শুরু হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ যাত্রা। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছে তারা রাতে। বিমানবন্দরে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের পাশাপাশি ১৬ কোটি বাঙালির শুভকামনাও সঙ্গী হয়ে থাকল ক্রিকেটারদের। বীরের বেশে তাঁদের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় এখন সবাই।

বিশ্বকাপের মঞ্চের পর্দা ওঠার বেশ কিছুটা সময় বাকি এখনো। ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে হবে প্রথম ম্যাচ। আর বাংলাদেশের খেলা তো আরো চার দিন পর; ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এত আগে দেশ ছাড়ার উদ্দেশ্য ভিনদেশের আবহাওয়া-কন্ডিশন-উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। দেশে প্রথম পর্বের প্রস্তুতির পর চূড়ান্ত অনুশীলন ক্যাম্প হবে ব্রিসবেনে। দুই সপ্তাহের সেই ক্যাম্পে ৩ ও ৫ ফেব্রুয়ারি দুটি গা গরমের ম্যাচও খেলবে বাংলাদেশ। আর আইসিসির অফিশিয়াল অনুশীলন ম্যাচ দুটি হবে সিডনিতে। ৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান এবং ১২ ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৩ ফেব্রুয়ারি গিয়ে ক্যানবেরায় থিতু হবে মাশরাফির দল। পাঁচ দিন পর আফগানদের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ সেখানেই।

বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ১৫ জনের মধ্যে কাল উড়ালে উঠেছেন ১৩ জন। সাকিব আল হাসান বিগ ব্যাশ খেলার জন্য আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ায়। আর হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর শল্যবিদ ডেভিড ইয়াংয়ের সঙ্গে ২৭ জানুয়ারি সাক্ষাৎসূচি ঠিক হয়ে আছে তামিম ইকবালের। যে কারণে আজ অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন তিনি। মেলবোর্নে ইয়াংকে হাঁটু দেখিয়ে ২৮ জানুয়ারি ব্রিসবেনে বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন এই ওপেনার।

বিমানবন্দরে বিদায় বেলায় ভালো করার আত্মবিশ্বাস জানিয়ে গেলেন মাশরাফি, ব্রিসবেনে কন্ডিশনিং ক্যাম্প গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারলে বিশ্বকাপে ভালো করা সম্ভব। মাহমুদ উল্লাহর কণ্ঠে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাগিদ, ভালো করার চেষ্টা থাকবে সবার। পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে হবে। মমিনুল হক দোয়া চাইলেন সবার কাছে, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলার ইচ্ছে আছে। সবাই দোয়া করবেন যেন আমরা ভালো খেলি। তাসকিন বিশ্বমঞ্চে নিজেকে চেনানোর রোমাঞ্চ মেখে উঠলেন বিমানে, বিশ্বকাপে বোলিং দিয়ে নিজেকে আলাদা করে চেনাতে চাই। বিশ্বকাপের সৌরভ লাগছে তাইজুল ইসলামেও, বিশ্বকাপ খেলার অনুভূতি অন্য রকম। সবার দোয়া চাই।

২০১১ বিশ্বকাপে এমন বিদায়ের কোনো ব্যাপার-স্যাপার ছিল না। বাংলাদেশের সব ম্যাচই যে হয়েছিল দেশের মাটিতে। এরও চার বছর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপের সময় অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে উড়াল দিয়েছিলো দল। সেবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়ে পুরো ক্রিকেটবিশ্বকেই চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকে এবারও কি ভেসে আসবে অমন সুখবর? কাল ঝলমলে হাসিতে বিদায় নেওয়া ক্রিকেটারদের মুখগুলো সে আশ্বাসই দিয়ে গেল যেন!