বাংলাদেশ কোথায়, অন্যরা কোথায়

মাথাভাঙ্গা মনিটর: দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রুম টেস্টে ৩৩৩ রানে হারের পর ব্লুমফন্টেইনে ইনিংস ও ২৫৪ রানের পরাজয়ের লজ্জা। টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে প্রোটিয়ারা। দেশের মাটিতে নিজেদের মোটামুটি লড়াকু দল হিসেবে পরিচিতি পেলেও বিদেশের মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশ সেই আগের বাংলাদেশই আছে। সে-ই বাংলাদেশ, যে দল কেবল প্রতিপক্ষের সামনে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণই করতে জানে, লড়তে পারে না! বিদেশে এই বিবর্ণ পারফরম্যান্সের মধ্যে বাংলাদেশ বড় সুখবরই পেল গতকাল। অকল্যান্ডে আইসিসির সভায় অনুমোদন হয়েছে আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। নতুন কাঠামোয় দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে তিনটি অ্যাওয়ে টেস্ট সিরিজ খেলতে হবে। বিদেশে নিয়মিত টেস্ট সিরিজ খেলার নিশ্চয়তা যেমন পাওয়া গেছে, বাংলাদেশকেও ভালো খেলতে হবে নিয়মিত। অতীতের অনুজ্জ্বল পরিসংখ্যানকে করতে হবে উজ্জ্বল। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে খেলেছে ৪৯ টেস্ট। এই সময়ে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র চারটিতে। সেই চারটির দুটি ২০০৯ সালে তুলনামূলক দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বাকি দুটি এসেছে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বিদেশের মাটিতে নিজেদের প্রথম ৪৯ টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের এই চিত্রের পাশাপাশি অন্যদের অবস্থাটাও জেনে নেয়া উচিত। বিদেশে খেলা প্রথম ৪৯ টেস্টে জয়ের পরিসংখ্যানে নিউজিল্যান্ড পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের চেয়ে। কিউইরা জিতেছে ৩টিতে। সমান টেস্টে ভারত ও শ্রীলঙ্কাও জিতেছে ৪টি। কিছুটা এগিয়ে পাকিস্তান; তারা জিতেছে ৫ টেস্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের সংখ্যা ৬টি। জয়ের সংখ্যায় বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে না থাকলেও হারের পরিসংখ্যান খুব একটা ভালো নয়। বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে ৪৯ টেস্ট খেলে হেরেছে ৪২টিতেই। বাংলাদেশের কাছাকাছি থাকা ভারতের হার সেখানে ৩০টিতে। বাংলাদেশের পরাজয়গুলোও যেনতেন নয়, অনেক বড় ব্যবধানেরই। ২৩টি ইনিংস ব্যবধানে, একটিতে ১০ উইকেটে আর পাঁচবার ২৫০ রানের বেশি ব্যবধানে পরাজয়। ৪৯ টেস্টের মধ্যে ২৯টিই বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে ইনিংস, ১০ উইকেট ও ২৫০ রানের বড় ব্যবধানের পরাজয়ের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশকে কোনো দলই ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। এমনকি বাংলাদেশের কাছাকাছিও যেতে পারেনি কেউই। দক্ষিণ আফ্রিকা বড় ব্যবধানে হেরেছে ১৭ টেস্টে, শ্রীলঙ্কা সেখানে ১৪টি, ভারত ১৩ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩।

গত অক্টোবরে ঢাকা টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর বাংলাদেশকে নিয়ে ইয়ান বোথাম বলেছিলেন, ‘তাদের এখন বিদেশের মাটিতে জিতে দেখাতে হবে। এই মুহূর্তে এটিই বাংলাদেশের জন্য অগ্নিপরীক্ষা।’ এই অগ্নিপরীক্ষায় বাংলাদেশ এখনো উতরে যেতে পারেনি। তবে আইসিসি নতুন যে কাঠামো প্রবর্তন করতে চাচ্ছে, তাতে কিন্তু উতরে যেতেই হবে। নইলে নতুন বিপদ এসে দাঁড়াতে পারে সামনে। হতে পারে বাংলাদেশের অবনমন। যদিও লিগ পদ্ধতিতে উত্তরণ-অবনমন পদ্ধতিটা কী রকম হবে, তা এখনো পরিষ্কার করেনি আইসিসি।