টেন্ডুলকারের সাফল্য-ব্যর্থতা

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ঘরের মাঠ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আবেগঘন পরিবেশে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন ব্যাটিং-কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভারতের ইনিংস ও ১২৬ রানের জয়ের সুবাদে বিদায়টাও হলো সাফল্যমণ্ডিত। ২৪ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে শাসন করেছেন পুরো বিশ্ব, রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মেতে উঠেছেন বহুবার। গড়েছেন রানের পাহাড়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে গড়েছেন ১০০টি শতকের রেকর্ড। টেস্ট-ওয়ানডে দু ধরনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের মালিকও তিনি। প্রতিপক্ষের বোলারদের কাছে তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। মুম্বাইয়ে জীবনের শেষ টেস্টে এক ইনিংসের বেশি ব্যাট করার সুযোগ পাননি। ২৬ রানের জন্য শতক না পাওয়ার আক্ষেপ হয়তো টেন্ডুলকার-ভক্তরা কখনোই ভুলতে পারবে না। ২০০ টেস্টে ৩২৯ ইনিংসে ৫৩.৭৮ গড়ে ১৫ হাজার ৯২১ রানে গিয়ে থামলো শচীনের পথচলা।

দর্শকদের দাবি মেটাতে শনিবার মুম্বাই টেস্টের তৃতীয় দিনে টেন্ডুলকারের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে কোনো সাফল্য পাননি। কোলকাতা টেস্টে শেন শিলিংফোর্ডকে এলবিডব্লিউ করাই তাই টেস্টে তার শেষ উইকেট হয়ে রইলো। টেস্টে ৫৪.১৭ গড়ে ৪৬টি উইকেট নিয়েছেন টেন্ডুলকার। টেস্টে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ২৪৮ রান। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এসেছিলো এ ইনিংস। গড় হিসেবে টেন্ডুলকারের সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্সও বাংলাদেশের বিপক্ষে, ৭ টেস্টে ১৩৬.৬৬ গড়ে পাঁচটি শতকসহ ৮২০ রান। দেখা যাচ্ছে, প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকেই সবচেয়ে পছন্দ করতেন তিনি। সেই সাথে বাংলাদেশের মাটিকেও। কারণ বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ গড়ের হিসেবে এখানেই সবচেয়ে ভালো খেলেছেন ক্রিকেটের ‘মহানায়ক’। বাংলাদেশ ও ভারতের সবগুলো টেস্টই হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে তার গড়ের হিসাব শুধু বাংলাদেশের মাটিতেই প্রযোজ্য।

টেস্টে টেন্ডুলকারের সর্বনিম্ন ব্যাটিং গড় পাকিস্তানের সাথে। ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে ১৮ টেস্টে ৪২.২৮ গড়ে এক হাজার ৫৭ রান করেছেন তিনি। দেশের মাটিতে তার ৯৪ টেস্টে ৫২.৬৭ গড়ে সাত হাজার ২১৬ রান। ঘরের মাঠে ২২টি শতক ও ৩২টি অর্ধশতক এসেছে তার ব্যাট থেকে। টেস্ট ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের সবচেয়ে বেশি রান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ৩৯ টেস্টে ৫৫ গড়ে তিন হাজার ৬৩০ রান। তার এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৬২ রান ২০১০ সালে। ১৪ টেস্টে ৭টি শতক ও ৫টি অর্ধশতকসহ ৭৮.১০ গড়ে এই রান করেন তিনি। সবচেয়ে খারাপ খেলেছেন ২০০৩ সালে। সে বছর পাঁচটি টেস্ট খেলে ১৭ গড়ে তার সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৫৩ রান।

চার বছর জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এ প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। তবে অধিনায়ক টেন্ডুলকার তেমন সফল নন। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টেন্ডুলকারের অধীনে ২৫টি টেস্ট খেলে মাত্র চারটিতে জিতেছে ভারত, হেরেছে ৯টি, বাকি ১২ ম্যাচ ড্র। ওয়ানডেতে রেকর্ড ৪৬৩টি ম্যাচ খেলে ৪৪.৮৩ গড়ে টেন্ডুলকার করেছেন ১৮ হাজার ৪২৬ রান। খেলেছেন ৪৯টি শতরানের ইনিংস। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে দ্বিশতক করার কৃতিত্বও তার। ২০০ রানের অসাধারণ ইনিংসটি এসেছিলো ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।

৫০ ওভারের ম্যাচে মোট রানের হিসেবে শচীনের সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, ৮৪ ম্যাচে ৪৩.৮৪ গড়ে তিন হাজার ১১৩ রান। এর মধ্যে আছে ৮টি শতক ও ১৭টি অর্ধশতক। ওয়ানডেতে গড় হিসেবে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে টেন্ডুলকারের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ৫৭ ম্যাচে ৩৫.৭৩ গড়ে তার মোট রান দু হাজার এক।

আর টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ওয়ানডে গড় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ৩৯ ম্যাচে ৫২.৪৩ গড়ে এক হাজার ৫৭৩ রান। এক পঞ্জিকাবর্ষে টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল বছর ১৯৯৮। সে বছর ৩৪ ম্যাচে ৬৫.৩১ গড়ে এক হাজার ৮৯৪ রান করেছিলেন তিনি। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও অধিনায়ক হিসেবে তেমন সাফল্য পাননি টেন্ডুলকার। ৭৩টি ওয়ানডেতে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেয়েছেন ২৩টি। হার প্রায় দ্বিগুণ, ৪৩টি। বাকি ৭ ম্যাচের ৬টি পরিত্যক্ত, অন্যটি ‘টাই’।

পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াদাঁদের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৬টি বিশ্বকাপে খেলার গৌরব টেন্ডুলকারের অধিকারে। ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান ও শতকও তার। বিশ্বকাপে ৪৫টি ম্যাচ খেলে ৫৬.৯৫ গড়ে ৬টি শতকসহ ২ হাজার ২৭৮ রান করেছেন তিনি। অনিয়মিত বোলার হিসেবেও বেশ কার্যকর ছিলেন টেন্ডুলকার। দলের প্রয়োজনে বল হাতে নিয়ে পেয়েছেন সাফল্য। কখনো প্রতিপক্ষের রানের চাকা শ্লথ করে দিয়েছেন, কখনো বা মূল্যবান ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দিয়েছেন ভারতকে। ওয়ানডেতে দুবার ম্যাচে পাঁচ উইকেট ও চারবার চার উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব আছে তার। ৪৪.৪৮ গড়ে ১৫৪টি উইকেট পেয়েছেন তিনি।