চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক যখন মেডিকেল অফিসার

 

স্টাফ রিপোর্টার: তৃর্ণমূল পর্যায় থেকে মেধাসম্পন্ন খেলোয়াড় বাছাই ও লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য প্রতি বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যস্থাপনায় দুটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হলো গ্রীষ্মকালীন অপরটি হলো শীতকালীন। এ ধারবাহিকতায় গত ২০ আগস্ট থেকে চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলা পর্যায়ের খেলা শুরু হয়ে ২৭ আগস্টে শেষ হয়। বালক কাবাডিতে চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাসা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তিতুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হয় জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা পর্যায়ের কাবাডি প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হওয়ার কথাছিলো চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাসা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় দলের। খেলা শুরুর পূর্বে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লাড্ডু চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে উভয় দলের খেলোয়াড়দের ডাকলেন মেডিকেল করার জন্য। ৭ সদস্য বিশিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটির মাত্র দু জন (লোটন ও ওয়ালিউল্লাহ সিদ্দিককে) সদস্য নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাসা দলের ৪ জন ভালো খেলোয়াড়কে বাদ দেয়া হয়। এ কমিটির সবচেয়ে অভিজ্ঞ সদস্য ওবাইদুল হক জোয়ার্দ্দার স্টেডিয়ামে হাজির থাকলেও তাকে সেখানে ডাকা হয়নি।  ৪ জন খেলোয়াড়কে কি কারণে বাদ দেয়া হলো এ বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া শিক্ষক জানতে চাইলে লাড্ডু বলেন, বয়স বেশি হওয়ার কারণে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। এ যাচাই-বাছাই কমিটির অন্যতম টেকনিকেল সদস্য একজন মেডিকেল অফিসার। মেডিকেল অফিসার ছাড়া কীভাবে রফিকুল ইসলাম লাড্ডু বয়স বেশি বলে ৪ জন খেলোয়াড়কে বাদ দিলেন? তা হলে কি তিনি একজন মেডিকেল অফিসারও বটে। কিন্তু মেডিকেল অফিসার ছাড়া আর ৬ জন সদস্য খেলোয়াড়দের শুধুমাত্র কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়া বয়সের ব্যাপারে কোনো সিন্ধান্ত দিতে পারেন না। এটাই মেডিকেল সায়েন্স বলে। এ ব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ প্রকৃতভাবে বয়স নির্ধারণের জন্য পুনরায় আবেদন করলে ডেকে নিয়ে আসা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডা. মশিউর রহমান পুনরায় মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে মাদরাসার ৩ খেলোয়াড়কে বৈধ ঘোষণা করেন। বাকি ১ জন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে বলে যান আপাতত না খেলার ব্যাপারে। তাহলে রফিকুল ইসলাম লাড্ডুর এ খেলোয়াড় বাতিল নাটক পক্ষপাতমূলক ও কুটুবুদ্ধি সম্পন্ন এটা স্পস্ট প্রতীয়মান। এর সুষ্ঠু সমাধান চাওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার আলাউদ্দীন আল-আজাদ ও মাদরাসা পরিচালনা পরিষদ সভাপতি হুমায়ূন কবীর মালিককে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়। অথচ তার আগেই রফিকুল ইসলাম লাড্ডু মাদরাসার খেলোয়াড়রা স্টেডিয়ামর বাইরে গেল কেন? এ ধরনের খোড়া যুক্তি দেখিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ওয়াকওভার দিয়ে দেন। অথচ কুমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় দল অসম্পন্ন কাগজপত্র, অস্পস্ট ছবি ও টটলিস্টবিহীন অবস্থায় অংশগ্রহণ করেও না খেলেই ওয়াকওভার লাভ করলো। আর এ ওয়াকওভার দেয়ার ঘটনাটি জেলা শিক্ষা অফিসারের সামনে ঘটলেও নীরবে তিনি এ সিদ্ধান্তের সম্মতি দেন। তখন চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাসার সভাপতি হুমায়ূন কবীর মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজ দলের খেলোয়াড়দেরকে ফলাফল মেনে নিতে বলে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন।

এ ঘটনায় মাঠে উপস্থিত অনেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লাড্ডুর এ মেডিকেল অফিসারের ভূমিকা দেখে হতবাক হন। স্টেডিয়ামে খেলোয়াড়দের মেডিকেল করতে আসা  ডা. মশিউর নিজেই মতামত ব্যক্ত করে বলেন, একজন মেডিকেল অফিসার ছাড়া সাধারণ মানুষ কারো বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে কোনো সিন্ধান্ত দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ সবাই একজনকে পাগল বললেও ডাক্তার যতোক্ষণ না তাকে পাগল বলে সার্টিফাই করছে ততোক্ষণ কাউকে পাগল বলা বেআইনী। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দন্ত বিশেষজ্ঞ ডা. জয়নাল আবেদীন বলেন, খেলোয়াড়দের বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে দাঁত পরীক্ষা-নিরীক্ষাই উত্তমপন্থা।

এদিকে যে দলটি উপজেলা পর্যায়ে ৪টি দলের সাথে প্রতিযোগিতা করেছে সেখানেও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। অথচ জেলার খেলায় এসে সে দলকে আউট করে দেয়া এটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয় বলে অভিযোগ করেন মাদরাসার খেলোয়াড় ও  শিক্ষকগণ।