চুয়াডাঙ্গায় স্টেডিয়াম নির্মাণের এক বছর পার হলেও হচ্ছে না উদ্বোধন

ক্রীড়াঙ্গণে নেমে এসেছে স্থবিরতা : হারাচ্ছে গৌরবময় ঐতিহ্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: এক সময়ে বৃটিশ আমলে কোলকাতা ফুটবলে সাড়া জাগানো এবং ঢাকার মাঠ কাপানো বেশ কয়েকজন কৃতী ফুটবালের জন্মভূমি চুয়াডাঙ্গায়। আজ সেই চুয়াডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গণে নেমে এসেছে স্থবিরতা। একদিকে ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে মাঠে নেই কোনো খেলাধুলার আয়োজন।

অন্যদিকে রয়েছে মাঠ সঙ্কট। ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শেষ হয়েছে আন্তজার্তিক মানের স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ। তিন তলা বিশিষ্ট ভিআইপি গ্যালারি, ড্রেসিং রুম, প্রেসবক্স, সাধারণ গ্যালারিসহ আধুনিক স্টেডিয়ামের প্রায় সব সুযোগ-সুবিধা। দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার। ১২.৩৬ একর জমির ওপর স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ প্রায় ১ বছর আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধন না হওয়ার কারণে মান্ধাত্বার আমলে মাঠে হতোশ্রি পরিবেশেই চালাতে হচ্ছে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলোয়ারদের অনুশীলন।

Chuadanga stadium Pictures-2 (2)

চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে ক্রীড়া চর্চার দীর্ঘ ঐতিহ্য। ১৯১৭ থেকে ১৯৫২ সময়কালে কোলকাতা তথা অলইন্ডিয়া ফুটবল টুর্নামেন্টে যেসব তারকা খেলোয়াড় অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের অধিকাংশেরই বাড়ি এ চুয়াডাঙ্গা জেলায়। এরা হলেন কানাই লাল, হরিদাস বৈরাগী, অনিল কুমার, মতিয়ার মল্লিক, ডুডি জোয়ার্দ্দার, শাহাব উদ্দিন, হাবু জোয়াদ্দার, ওদুদ মণ্ডল ও শাফায়েত বিশ্বাস। শাফায়েত বিশ্বাস ১৯৫২ সালে পূর্ব-পাকিস্তান বাছাই একাদশের হয়ে ইরানের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। এছাড়াও ৯০ দশকে ঢাকা ব্রাদাসের অধিনায়ক মাহামুদুর রহমান লিটন ও আবাহানীর পক্ষে মাঠ কাপানো মামুন জোর্য়াদ্দার ক্রীড়া নৈপূণ্য সাড়া দেশে আড়োলন সৃষ্টি করে। তারপর থেকে ধিরে ধিরে হারাতে বসেছে চুয়াডাঙ্গার ফুটবলের ঐতিহ্য ইতিহাস। প্রতি বছর নিয়মিত ফুটবল লিগ ও ক্রিকেট লিগ না থাকায় খেলাধুলায় এ অচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তৈরি হচ্ছে না নতুন কোনো খেলোয়াড়।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, ক্রীড়াঙ্গণে রাজনীতির চর্চা হলে সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। খেলাধুলা থেকে রাজনীতি মুক্ত করতে হবে। যতো বেশি খেলার আয়োজন করা হবে, ততই বেরিয়ে আসবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। যেহেতু আমাদের ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব কোনো মাঠ নেই। বর্তমানে যে স্টেডিয়ামে খেলা হয় সেটি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। এছাড়া রয়েছে একটি টাউন কমিটির মাঠ। এ দুটি মাঠে সংস্কার ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বছরের অর্ধেক সময় সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ থাকে। নতুন স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন হলে খেলোয়াড়দের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা ফিরে পাবে।

শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের কোচ রাসেল আহমেদ ও নাইটিঙ্গেল ক্লাবের পরিচালক ইসলাম রকিব বলেন, চুয়াডাঙ্গা ফুটবলে এক সময় স্বর্ণ যুগ ছিলো। এখন সেই অবস্থা নেই। ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা এখন ঠিকমত মাঠে আসেন না। যার কারণে খেলার মাঠ ও স্টেডিয়াম জ্বরাজীর্ণ অবস্থা। কর্মকর্তাদের অবহেলায় গত তিন বছর ধরে মাঠে নিয়মিত খেলা হয়নি। ২ বছর আগে ফুটবল লিগের খেলা হলেও সেটার ফাইনাল আজও হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে টাউন ফুটবলমাঠ, কলেজ মাঠ ও স্টেডিয়ামে কিছু কিছু খেলোয়ার মাঝে মাঝে অনুশীলন করে থাকে।

ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোর্য়াদ্দার টোটন বলেন, চুয়াডাঙ্গায় আর্ন্তজাতিক মানের যে স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে সেটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ স্টেডিয়ামকে ঘিরে এ অঞ্চলের ক্রীড়া চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। তবে শুধু চুয়াডাঙ্গাতেই নয়, সারাদেশেই ক্রিকেট বাদে সকল খেলাখুলায় নিয়মিত হয় না। তারপরও ক্রীড়া সংস্থার কিছু কর্তকর্তার অবহেলার কারণে চুয়াডাঙ্গার খেলাধুলা অন্যান্য জেলার তুলনায় আরো পিছিয়ে গেছে।

বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে ৯০ দশক পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার ফুটবল অঙ্গণে ছিলো স্বর্ণ যুগ। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ক্রীড়ামোদীরা আন্তরিক হলে আবারও এ জেলায় খেলোয়াড় দেশ-বিদেশে মাঠ কাঁপাবে এমনটি প্রত্যাশা চুয়াডাঙ্গাবাসীর।