গাংনীর হাড়ভাঙ্গায় গ্রামীণ খেলাধুলা প্রতিযোগিতা : সবাইকে টপকে হাড়ি ভাঙলেন ৮০ বছর বষয়ী বৃদ্ধ

 

মাজেদুল হক মানিক: চারদিকে উৎসুক দর্শক। হৈ-হুল্লোড় আর চিৎকার। উল্লাসে মেতেছে গোটা মাঠ। এক জন দু জন নয় ২২ জন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ চেষ্টা করছেন হাড়ি ভাঙার। চোখ বাঁধা অবস্থায় লাঠি হাতে করে ছুটে যাচ্ছেন প্রতিযোগীরা। কেউ লাঠি দিয়ে আঘাত করেছেন হাড়ির কাছাকাছি আবার কেউ আঘাত করছেন হাড়ি ছাড়া অনেক দূরে। তাহলে কি হাড়ি কেউ ভাঙতে পারবে না? তবে খেলা নিয়ে দর্শকদের মাঝে আনন্দের শেষ নেয়। শেষ পর্যন্ত দর্শকদের অতৃপ্ত মনে তৃপ্তি এনে দিলেন বয়োবৃদ্ধ বিদু মণ্ডল। আশির কাছাকাছি বয়সী এই কৃষক সঠিক নিশানায় আঘাত করে অবশেষে ভাঙলেন হাড়ি। এবার মাঠে উপস্থিত হাজারো দর্শক তাকে মাথায় তুলে নাচানাচি শুরু করলেন। সোরগোল পড়ে গেল তাকে নিয়ে। কেননা তিনিই যে হাড়িভাঙা খেলার নায়ক। গ্রামীণ এমন ঐহিত্যবাহী খেলাধুলায় গতকাল শনিবার মুখর ছিলো মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙা এইচএসকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিবুল ইসলামের উদ্যোগে গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণীদের নিয়ে বিলুপ্ত প্রায় এসব খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।

গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীণ খেলাধুলা। হাড়িভাঙা, বস্তা দৌড়, মোরগ লড়াই, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা, তিন পায়ে দৌড়, গুপ্তধন সন্ধান, উল্টা দৌড়া, ধীরে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করেন গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ। দিনভর আনন্দ উপভোগের মধ্যদিয়ে বিকেলে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজিপুর ইউপি ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মহিবুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম, আরোজ আলী মাস্টার, রফিকুল ইসলাম, আয়োজক কমিটির সদস্য বাবু, লিপটন, আশরাফুল, জৌলুস, পল্টু, এখলাছ ও রবিউল প্রমুখ।

গ্রামীণ খেলাধুলা তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এ আয়োজন বলে জানান আয়োজক। খেলায় অংশগ্রহণ করে সেই শৈশবে ফিরে গিয়েছিলেন বলেন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন হাড়িভাঙা প্রতিযোগিতার নায়ক বিদু মণ্ডল। তিনি বলেন, আজকাল এসব খেলাধুলা ছেলে-মেয়েরা বোঝে না। এর মধ্যে যে নির্মল আনন্দ আছে তা উপলদ্ধি করতে হবে। তাহলে সমাজটা আরো সুন্দর হবে। খেলা মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় করে এবং তরুণদেরকে বিপথ থেকে ফেরাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন গ্রামের এই বয়োবৃদ্ধ।