ইংল্যান্ডের জয় অস্ট্রেলিয়ার বিদায় : সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

টেলিভিশনের সামনে বসা টাইগারপ্রেমীদের উল্লাস : ফেসবুক ভাইরাল

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ৪০ রানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এরফলে গ্রুপ ‘এ’ থেকে ইংল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হলো। অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ২৭৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ইংলিশরা। দলীয় মাত্র ৩৫ রানেই টপ অর্ডারের ৩ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে ইংলিশরা। কিন্তু স্টোকস-মর্গান এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন। চতুর্থ উইকেটে তারা ১৫৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে তোলেন। মর্গান ৮৭ রান করে জাম্পার সরাসরি থ্রুতে দুর্ভাগ্যজনক রান আউটের শিকার হন। ৪০.২ ওভারে চার উইকেটে ২৪০ রান থাকা অবস্থায় বৃষ্টির হানায় খেলায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে ইংলিশদের ৪০ রানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

ইংল্যান্ডের একেকটা রান হচ্ছে আর টেলিভিশন সেটের সামনে বসা বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরা উল্লাসে ফেটে পড়ছেন! কোনো ক্রিকেট ম্যাচে এতোবেশি সমর্থকের সমর্থন কি আগে কখনও পেয়েছিলো ইংল্যান্ড? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালকের এ ম্যাচে পুরো বাংলাদেশ যে ইংলিশদের হয়ে হাততালি দেয়। কারণ আর কিছু নয়! ইংল্যান্ড এ ম্যাচ জিতলেই যে বাংলাদেশও ‘জিতে’ যায় আরও অনেক বড় কিছু। পেয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের টিকেট! শেষ পর্যন্ত এ ম্যাচে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশের সমর্থনটা নিরর্থক হয়নি। অস্ট্রেলিয়াকে বৃষ্টি আইনে হারিয়ে দেয় ইংল্যান্ড ৪০ রানে। স্বাগতিকদের জয়ের সাথে সাথে বাংলাদেশজুড়ে যে আনন্দধ্বনি শোনা গেলো। সম্ভবত খোদ গোটা ইংল্যান্ডেও এমন উল্লাস হলো না! জিতলো ইংল্যান্ড। হারলো অস্ট্রেলিয়া। আর সেমিফাইনালে পৌঁছে গেলো বাংলাদেশ। বার্মিংহামের এজবাস্টনে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার এ ম্যাচ যখন হচ্ছিলো তখন আরেক শহর কার্ডিফে টেলিভিশনের সামনে বসে খেলা দেখছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ইংল্যান্ডের জয়ের অপেক্ষায় যে তারাও অধীর আগ্রহে ছিলো। কাউকেই নিরাশ করেনি মরগানের দল। ডি/এল মেথডে ৪০ রানে ম্যাচ জিতে তারা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দেয় চিরকালীন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে। ইংল্যান্ডে জয়ী ঘোষণার সাথে সাথে টাইগার সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের উচ্ছাস জানান দিতে থাকে।

গতকাল শনিবার এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ২৭৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩৫ রান করার পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির আগে জেসন রয় ৪ রান করে মিচেল স্টার্কের বলে আউট হন। অন্যদিকে অ্যালেক্স হেলস (০) এবং জো রুট (১৫) আউট হন জশুয়া হ্যাজলউডের বলে। এরআগে এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে আদিল রশিদ এবং মার্ক উডের বোলিং তোপে ২৭৭ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। এদিন শুরুটা ভালো করে ডেভিড ওয়ার্নার এবং অ্যারইন ফিঞ্চ। তবে ৪০ রানের মাথায় ওয়ার্নারকে ব্যক্তিগত ২১ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মার্ক উড। এরপর ফিঞ্চ এবং অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ মিলে বাংলাদেশের স্বপ্নকে ম্লান করে দিতে থাকে। ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকেন স্মিথ ও ফিঞ্চ। ৯৬ রানের এই জুটি ভাঙেন বেন স্টোকস। ৬৮ রানে ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মর্গানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার ফিঞ্চ। তবে একপ্রান্তে যেন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন স্মিথ। ময়েচেজ হেনরিকস মাত্র ১৭ রান করে আদিল রশিদের বলে লিয়াম প্লাঙ্কিটের হাতে ধরা পড়েন। এরপর অধিনায়ক স্মিথও ৫৬ রান করে উডের বলে প্লাঙ্কিটের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। দারুণ খেলছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ত্রাভিস হেড। ৫৮ রানের জুটি গড়েন তারা। তবে ব্যক্তিগত ২০ রানে উডের বলে সীমানার কাছে জেসন রয়ের হাতে ধরা পড়েন ম্যাক্সওয়েল। নিশ্চিত ৬ রান বাঁচিয়ে বলটিকে তালুবন্দী করেন রয়। এরপর নিজের নবম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন আদিল রশিদ। ম্যাথু ওয়েডকে ব্যক্তিগত ২ রানে ফিরতি ক্যাচ নেন রশিদ। মিচেল স্টার্ক রানের খাতা খোলার আগেই রুটের হাতে ধরা পড়েন। নিজের কোটার শেষ ওভারে এসে পেট কামিন্সকে ব্যক্তিগত ৪ রানে ফিরতি ক্যাচ নেন রশিদ। পরের ওভারেই জাম্পাকে ফেরান উড। জাম্পা কোনো রান করতে পারেননি। এক সময় অলআউট হওয়ার শংকায় পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তবে একপ্রান্তে আগলে রেখে দারুণ ব্যাট করেন ত্রাভিস হেড। তার ব্যাটে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৭ রান করে অস্ট্রেলিয়া। হেড ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ায় অস্ট্রেলিয়া হতাশায় পুড়লেও বাংলাদেশের মুখে খেলছে চওড়া হাসি। ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে গিয়ে তারা উঠে গেছে সেমিফাইনালে। আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য। সাফল্যের সীমানাটা মাশরাফিরা এবার কত দূর টেনে নিতে পারেন সেটি দেখতে অপেক্ষায় থাকুন। সেমিতে টাইগাররা খেলবে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিনয়নের বিপক্ষে। যেখানে আছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকা।