আবারও ধবলধোলাই নিউজিল্যান্ড

বিরাট সংগ্রহ তাড়া করে সেই চ্যালেঞ্জে জিতে সিরিজের মধুর ইতি

স্টাফ রিপোর্টার: মিরপুরে প্রথম দু ওয়ানডে সহজেই জিতে সিরিজ পানসে করে ফেলা বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের। ফতুল্লায় শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরাট সংগ্রহ তাড়া করে সেই চ্যালেঞ্জে জিতে সিরিজের মধুর ইতি টানলো স্বাগতিকরা।

৩০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সবসময়ই কক্ষপথে ছিলো মুশফিক বাহিনী। শামসুর রহমান আর নাঈম ইসলাম দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দেয়ার পর নাসির হোসেনের ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিঙে ৪ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেটে জিতে যায় তারা। ২০১০ সালের পর নিউজিল্যান্ড আরেকবার পড়লো সবগুলো ম্যাচে পরাজয়ের লজ্জায়। সেবার ৫ ম্যাচের সিরিজে অতিথিদের চারটিতেই হারায় স্বাগতিকরা। বৃষ্টির কারণে মাঠে গড়ায়নি অন্য ম্যাচটি।

Ullas

এর আগে কেনিয়ার বিপক্ষে দু’বার, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একবার করে সিরিজের সব ম্যাচ জিতেছিলো বাংলাদেশ। গতকাল রোববার সকালে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে টসে জিতে অতিথিদের ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। রস টেইলরের নবম শতকে ৫ উইকেটে ৩০৭ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৪৯ ওভার ২ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

জিয়াউর রহমানের সাথে শামসুর রহমানের ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়। মিচেল ম্যাকক্লেনাগানের বল এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে থার্ডম্যানে অ্যাডাম মিল্নের হাতে তামিম ইকবালের বদলে খেলতে নামা জিয়াউর (২২) ধরা পড়লে ভাঙে ৭ ওভার ৪ বল স্থায়ী জুটি।

দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হকের সাথে ৬৫ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন শামসুর। ৩৩ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ৩২ রান করে মুমিনুল অ্যারন ডেভসিচের ফিরতি ক্যাচে পরিণত হন। নাথান ম্যাককালামের পরের ওভারে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম স্কয়ার লেগে টেইলরকে ক্যাচ দিলেও দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান শামসুর ও নাঈম ইসলাম। নাঈমের সাথে ৭৫ রানের জুটি গড়ে দলকে ৩ উইকেটে ২০৪ রানের দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে মাঠ ছাড়েন শামসুর। কোরি অ্যান্ডারসনের বলে উইকেটরক্ষক লুক রঞ্চির গ্লাভসবন্দী হওয়া এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৪ রানের জন্য শতক পাননি। ৯৬ রান করা শামসুরের ১০৭ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কা।

নাসির হোসেনের সাথে নাঈমের ৫০ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি দলকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা সপ্তম জয়ের দিকে নিয়ে যায়। ৭৪ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৬৩ রান করা নাঈম সাজঘরে ফিরেন রান আউট হয়ে। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (১৬) বিদায় স্বাগতিকদের একটু চাপে ফেললেও নাসির হোসেন দলকে স্বস্তির জয় এনে দেন। ৩৯ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন নাসির। উইকেটে তার সাথে থাকা সোহাগ গাজীর চারে আসে কাঙ্ক্ষিত জয়।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। এ সিরিজের প্রথম ওয়ানডের ২৬৫ রান ছিলো আগের সর্বোচ্চ। আর এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতার ঘটনা। এর আগে ২০০৯ সালের অগাস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়ায়োতে বাংলাদেশ জিতেছিলো ৩১৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে। সকালে টম ল্যাথামের সাথে অ্যান্টন ডেভসিচের ৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটি নিউজিল্যান্ডকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলো। মাহমুদুল্লাহর বলে শর্ট ফাইন লেগে আব্দুর রাজ্জাকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ডেভসিচ বিদায় নেয়ার পর বেশিক্ষণ টেকেননি তিন নম্বর ব্যাটসম্যান গ্রান্ট এলিয়ট (৩)। রাজ্জাকের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। দলীয় রান একশ পেরুনোর পর সাজঘরের পথ ধরেন ল্যাথামও। ৭৩ বলে ৪৩ রান করা এই ওপেনারকে রুবেলের বলে গ্লাভসবন্দী করেন মুশফিকুর রহিম।

এরপর সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা কলিন মানরোর সাথে টেইলরের ১৩০ রানের জুটিতে অতিথিদের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে উঠে। ৭৭ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৮৫ রান করা মানরোকে বিদায় করে জুটি ভাঙেন মাহমুদুল্লাহ। এরপর কোরি অ্যান্ডারসন (১) সোহাগ গাজীর বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে জিয়াউর রহমানের হাতে ক্যাচ দিলে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে।

২৬তম ওভারে জীবন পাওয়া টেইলর অপরাজিত থাকেন ১০৭ রানে। ওই ওভারের ব্যক্তিগত তিন রানে টেইলরের ফিরতি ক্যাচ ধরতে পারেননি রুবেল হোসেন। টেইলরের ৯৩ বলের ইনিংসে ছিল ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা। ছক্কা তিনটি এসেছে অফস্পিনার সোহাগ গাজীর করা ৪৭তম ওভারে পর পর তিন বলে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় শতক পাওয়া টেইলরের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ১৫ ওভারে ১৪৬ রান তুলে নেয় অতিথিরা। লুক রঞ্চির সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৪ বলে উঠে ৭৫ রান।

৩৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাহমুদুল্লাহ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩০৭/৫ (ডেভসিচ ৪৬, ল্যাথাম ৪৩, এলিয়ট ৩, টেইলর ১০৭*, মানরো ৮৫, অ্যান্ডারসন ১, রঞ্চি ১৩*; মাহমুদুল্লাহ ২/৩৬, রুবেল ১/৩৮, রাজ্জাক ১/৫৭ সোহাগ ১/৬৭)। বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ওভারে ৩০৯/৬ (শামসুর ৯৬, জিয়া ২২, মুমিনুল ৩২, মুশফিকুর ২, নাঈম ৬৩, নাসির ৪৪*, মাহমুদুল্লাহ ১৬, সোহাগ ১১*; ম্যাকক্লেনাগান ২/৬৫, ডেভসিচ ১/৩৬, নাথান ১/৪৪, কোরি ১/৫৬)। ম্যাচ সেরা: শামসুর রহমান। সিরিজ সেরা: মুশফিকুর রহিম।