আফগানদের উড়িয়ে দারুণ শুরু বাংলাদেশের

মাথাভাঙ্গা মনিটর: আফগানদের হুংকারে কাজ হলো না; বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে আসা দলটিকে হেসে-খেলেই হারালো বাংলাদেশ। ১০৫ রানের এ সহজ জয়ে বিশ্বকাপটা দারুণভাবে শুরু করলো মাশরাফিরা। বাংলাদেশকে তাদের নিজেদের মাঠেই হারিয়ে ম্যাচ শুরুর আগে নিজেদের ‘ফেভারিট’ দাবি করছিলো আফগানরা। তাদের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি তো আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে হুমকি দিয়েছিলেন, চাপে থাকবে বাংলাদেশ। মাঠেই বাংলাদেশ দেখিয়ে দিলো কারা এগিয়ে। সাথে নেয়াও হলো ফতুল্লায় ৩২ রানে হারের প্রতিশোধ। শুরুতে রানের গতি ভালো না হলেও মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিঙে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। এরপর মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেনদের মারাত্মক বোলিঙে সহজ জয় নিশ্চিত করে তারা। গতকাল বুধবার ক্যানবেরার ম্যানুকা ওভালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শেষ বলে ২৬৭ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
জবাবে ৪২ ওভার ৫ বলে ১৬২ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাশরাফি, রুবেলের আগুন ঝরানো বোলিঙে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি আফগানিস্তানের। প্রথম তিন ওভারে মাত্র ৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। প্রথম ওভারে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে জাভেদ আহমাদি ও তৃতীয় ওভারে আসগর স্তানিকজাইকে স্লিপে মাহমুদুল্লাহর ক্যাচে পরিণত করে বিদায় করেন মাশরাফি। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আফসার জাজাইকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রুবেল। তিন পেসার মাশরাফি, রুবেল ও তাসকিন আহমেদের নিখুঁত লাইন-লেন্থের বোলিঙে রানের জন্য রীতিমত লড়াই করতে হয় আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। চতুর্থ উইকেটে নওরোজ মঙ্গলের সাথে ৬২ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন সামিউল্লাহ সেনওয়ারি। এ রান করতে তারা খেলেন ১৯.৪ ওভার। মাহমুদুল্লাহর বলে স্কয়ার লেগ সীমানায় রুবেলের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে নওরেজের বিদায়ে ভাঙে আফগান প্রতিরোধ। এরপর সাব্বির রহমানের দারুণ থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান সামিউল্লাহ।

ষষ্ঠ উইকেটে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি। নাজিবুল্লাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাদের ৫৮ রানের প্রতিরোধ ভাঙেন সাকিব। রানের গতি বাড়াতে মরিয়া ছিলেন নবি, তবে খুব একটা সফল হননি তিনি। সর্বোচ্চ ৪৪ রান করা আফগান অধিনায়ককে সৌম্যর ক্যাচে পরিণত করে বাংলাদেশকে জয়ের দিকে নিয়ে যান মাশরাফি। নবির বিদায়ের পর বেশিদূর এগোয়নি আফগানিস্তানের ইনিংস। মিরওয়াইস আশরাফকে মাশরাফির ক্যাচে পরিণত করে দ্বিতীয় উইকেট নেন সাকিব। হামিদ হাসানকে ফিরিয়ে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম উইকেট নেন তরুণ তাসকিন। এরপর আফতাব আলম রান আউট হয়ে গেলে স্বস্তির জয় পায় বাংলাদেশ। ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বাংলাদেশের সেরা বোলার। এর আগে শুরুতে ভীষণ সতর্ক ছিলেন বাংলাদেশের দু উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও এনামুল। দেখে শুনে খেলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন এ দু ব্যাটসম্যান। এক রান নেয়ার ক্ষেত্রে এ ব্যাটসম্যানের বোঝাপড়ার অভাব ছিলো। তাই রান নেয়া সম্ভব ছিলো এমন কিছু এক রান নিতে পারেননি তারা। আশরাফের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক জাজাইয়ের গ্লাভসবন্দি হয়ে তামিমের বিদায়ে ভাঙে ১৪.৩ ওভার স্থায়ী জুটি। আশরাফের পরের ওভারেই বিদায় নেন এনামুল। এলবিডব্লিউ হয়ে যান এ ডান হাতি ব্যাটসম্যান। রিভিউ নেন তিনি কিন্তু তাতে সিদ্ধান্ত বদলায়নি। দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্য। তৃতীয় উইকেটে এ দু জনে গড়েন ৫০ রানের জুটি। ষোড়শ ওভারে ৫০ রানে পৌঁছুনো বাংলাদেশের ১০০ রান হয় ২৫তম ওভারের শেষ বলে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে সৌম্যকে এলবিডব্লিউর ফাদে ফেলে ৯.১ ওভার স্থায়ী তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন শাপুর জাদরান। আগের তিন ব্যাটসম্যানের মতো থিতু হয়ে আউট হন মাহমুদুল্লাহও। শাপুরের বলে জাজাইয়ের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদুল্লাহ বিদায় নেয়ার সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিলো ৪ উইকেটে ১১৯ রান। নেমেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা সাকিবের সাথে জুটি বাধেন মুশফিক। তিনি রানের গতি বাড়াতে থাকলে একটু দেখেশুনে খেলা শুরু করেন সাকিব। ব্যাটিং পাউয়ারপ্লের আগে থিতু হয়ে যান দু ব্যাটসম্যানই। ৩৫তম ওভার শেষে সাকিবের রান ছিল ২২ বলে ১৮ আর মুশফিকের ২০ বলে ২০। এ দু জনের দাপুটে ব্যাটিঙে পাউয়ারপ্লে অর্থাৎ ৩৬ থেকে ৪০ এ পাঁচ ওভারে ৪৮ রান যোগ করে বাংলাদেশ।

হাসানের স্লোয়ার বলে ব্যাটের কানায় লেগে সাকিব বোল্ড হলে ভাঙে ১১৪ রানের চমৎকার জুটি। ১৫.৩ ওভার বা ৯৩ বলে এ রান করেন সাকিব-মুশফিক। সাকিব, মুশফিকের জুটিই বাংলাদেশের সফলতম; এ নিয়ে চার বার শতরানের জুটি গড়লেন এ দু জনে। ৬৩ রান করা সাকিবের ৫১ বলের ইনিংসটি ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় গড়া। এ ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে চার হাজার রানের পৌঁছুনোর কৃতিত্ব দেখান সাকিব। এক সময়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিলো ৪ উইকেটে ২৩৩ রান। এরপর মাত্র ৩৪ রান যোগ করতে শেষ ৬ উইকেট হারায় তারা। সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের রানের গতিতে ভাটা পড়ে। সাব্বিরের দ্রুত বিদায় অস্বস্তি আরো বাড়ায়। নবির ফুলটস ঠিকভাবে খেলতে না পেরে সামিউল্লাহ সেনওয়ারির হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ম্যাচ সেরা মুশফিকের চমৎকার ইনিংসটি। ৭১ রান করা এ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৫৬ বলের ইনিংসটি ৬টি চার ও ১টি ছক্কা সমৃদ্ধ। শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারানোয় সংগ্রহ আরো বড় হয়নি বাংলাদেশের। আফতাবের করা শেষ ওভারে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন মাশরাফি। শেষ বলে তাসকিন বোল্ড হলে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

আফগানিস্তানের শাপুর, আশরাফ, আফতাব ও হাসান দুটি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা: মুশফিকুর রহিম।