সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুবাই প্রবাসী শরিফুলের লাশ ১২ দিন পর দেশে ফেরত

জয়রামপুর ঠাকুরপাড়ায় পরিবারে শোকের মাতম : দাফন সম্পন্ন

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধ: সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুবাই প্রবাসী শরিফুলের মরদেহ ১২ দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে তার নিজ গ্রামে পৌঁছায়। পরে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর ঠাকুরপাড়ার তৈয়ব আলীর মেজো ছেলে শরিফুল (২৮) অভাবের সংসারে আলোর প্রদীপ জ্বালাতে ৬ বছর আগে দুবাই শহরে পাড়ি জমান। কাজ পান রাজমিস্ত্রির। রাত-দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে থাকেন শরিফুল। বছর তিনেক আগে ৬ মাসের ছুটিতে একবার বাড়িও আসেন। ছুটি শেষে আবারও পাড়ি জমান দুবাই শহরে। এবারও ৬ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসার সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছিলেন। আগামী ১০ জানুয়ারি ছিলো তার দেশে আসার ফ্লাইটডেট। একমাত্র মেয়ে সুমাইয়ার জন্য দুবাই শহর থেকে খেলানাসহ কিনেছিলেন অনেক কিছুই। ফ্লাইট কনফার্ম হওয়ার পর থেকে শরিফুল দেশে আসার জন্য শুধুই অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন। বহুদিন পর দেখা হবে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী রূপালী ও একমাত্র মেয়ে সুমাইয়ার সাথে। তার সেই ইচ্ছা যে আর কোনোদিন পূরণ হবে না তা স্বপ্নেও ভাবেননি শরিফুল। গত ২২ ডিসেম্বর ভোর ৫ টার দিকে দুবাই শহরের আবাসিক এলাকা সোনাপুর থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। নিহত শরিফুল ছিলেন ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে মেজো। এ দিকে শরিফুলের মৃত্যুর খবর জয়রামপুরে পৌঁছুনোমাত্রই ঠাকুরপাড়া ও নওদাপাড়াসহ পুরো গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরিবারের কাঁন্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। স্বামীকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী রূপালী খাতুন। শোকে পাথর হয়ে পড়েন নিহত শরিফুলের পিতা-মাতাও।

নিহত শরিফুলের সাথে প্রায় বছর দশেক আগে একই গ্রামের নওদাপাড়ার তেঁতুলের মেয়ে রূপালীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া জন্ম হয়। সুমাইয়া পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার কিছুদিন পরই তার শরীরে ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেয়। শরিফুল পেশায় ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রি। প্রতিদিন যে টাকা আয় হতো তা মেয়ের চিকিৎসার পিছনেই ব্যয় হয়ে যেতো। একবেলা খেয়ে না খেয়ে প্রায় দু বছর চিকিৎসা করিয়েও ভাল না হলে ডাক্তারের পরামর্শে অপারেশনের জন্য নেয়া হয় ঢাকায়। অতিকষ্টের মধ্যদিয়েও প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে একমাত্র মেয়ে সুমাইয়াকে করানো হয় অপারেশন। একদিকে সংসার অন্যদিকে মেয়ের ওষুধ খরচ সবকিছু  মিলে শরিফুল যখন অনেকটাই দিশেহারা তখন সংসারের অভাব ঘোচাতেই ধারদেনা করে পাড়ি জমান দুবাই শহরে। গতকাল বৃহস্পতিবার শরিফুলের লাশ গ্রামে পৌঁছুনোর পর জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।