স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন মুহিত-মাকসুদুল-বন্যাসহ ১৪

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পেতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৬ সালে তার সাথে এই পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন পাটের জীন রহস্য আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দেয়া বিজ্ঞানী প্রয়াত মাকসুদুল আলম, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী আবদুস সালাম ও প্রয়াত রফিকুল ইসলামকেও এই পদকের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল সোমবার স্বাধীনতা পদকের জন্য যে ১৪ ব্যক্তির নাম ঘোষণা করেছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রমানিকের নামও রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং দেশের জলসীমায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবারের স্বাধীনতা পদক পেতে যাচ্ছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই পদক তুলে দেবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগঠক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে এই পদক দেয়া হবে। কৃষি গবেষক ড. মাকসুদুল আলম এই পদক পাচ্ছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তোষা ও দেশি পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে। মন্ত্রিসভায় মুহিতের সহকর্মী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে এই পদক পাবেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭১ সালে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প, অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে এই স্বীকৃতি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং সমাজসেবক মরহুম মৌলভী আচমত আলী খান।

সুপারসনিক এয়ারক্রাফট এফ-৬ এর পাইলট এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স গঠন প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার বদরুল আলম বীরউত্তম পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। পদক পাচ্ছেন ১৯৭১ সালে রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক রাজশাহী পুলিশ লাইনস আক্রমণ প্রতিরোধে পুলিশ ফোর্স সংগঠনে নেতৃত্বদানকারী শহিদ শাহ আব্দুল মজিদ। রাঙামাটিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে নেতৃত্বদানের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শাহাদতবরণকারী রাঙামাটির তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলীও এবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতার সপক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করার স্বীকৃতি হিসেবে এবার স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন সৈয়দ হাসান ইমাম। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী এবং রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা সংস্কৃতি ক্ষেত্রে এবার স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হাইকমিশন, লন্ডনে কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী এবং বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান স্বহস্তে লেখক প্রয়াত একেএম আবদুর রউফও এবারের সম্মাননার জন্য মনোনীত হয়েছেন। ১৯৭১ সালে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত থাকাকালে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী এবং দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রথম মিশন স্থাপনকারী কেএম শিহাব উদ্দিন। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী মরহুম রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম মাতৃভাষা ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পদক পাবেন। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রফি খান (এম আর খান) চিকিৎসা বিদ্যায় এবার পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। মনোনীতরা একটি স্বর্ণপদক এবং নগদ দুই লাখ টাকা পাবেন। পুরস্কারের এই অর্থমূল্য বাড়ানোর একটি প্রস্তাব সম্প্রতি মন্ত্রিসভার সায় পেয়েছে।