স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া : পুঁজি দোতরা আর প্রেম জুড়ি

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীর শহরের হাসপাতাল বাজারে রাস্তার পাশের নজর আলীর চায়ের দোকানে বেশ জটলা। প্রেমজুড়ির খুচ খাচ শব্দ আর দোতরার টুং টাং শব্দ ভেসে আসছে। সেই সাথে ভেসে আসছে গান ‘আমার হাড় কালা করলাম রে আমার দেহ কালার লাইগা রে… অন্তর কালা করলাম রে, দুরন্ত পরবাসে।’ কৌতুহল বশতঃ কাছে গিয়ে দেখা গেলো, এক অন্ধ শিল্পী ও তার মহিলা সহযোগীকে ঘিরে আছে অন্তত ১৫/২০ জন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কেউ কেউ আবার ছবি তুলছেন। আবার কেউ ভিডিও ধারণ করছেন মুঠোফোনে। ছোট্ট পুরাতন তিন তার বিশিষ্ট দোতারায় মাত্র দু হাতের ৪টি আঙ্গুলের সাহায্যে যাদু মাখা সুর তোলা এ শিল্পীর নাম পাপ্পু সরকার। সাথে প্রেম জুড়ি বাজাচ্ছিলেন তার স্ত্রী সবুজা জান খাতুন ওরফে সাথী। এদের বাড়ি পাশ্ববর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুণ্ডি জামালপুর।

তালিম না নিলেও চাচা মুন্তাজ বিশ্বাসের গান শুনে আর শরিফুল ডাক্তারের দোতরার সুর শুনে নিজেই সব রপ্ত করেছেন পাপ্পু।  জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাপ্পু সরকার। সংসারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে নুপুর স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে মনিকা আজও পাঠশালায় যায়নি। সামনে বছর বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হবে।

জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধি তাই কেউ কাজে নেন না। তার ওপর বিয়ে? এ যেনো আকাশ কুসুম ভাবনা। গলায় যার যাদু মাখা সুর তাকে কি অবহেলা করা যায়? তাইতো বছর দশেক আগে সবার অমতে বিয়ে করেন স্ত্রী সবুজজান খাতুন ওরফে সাথী। বছর দুয়েক পর কোল জুড়ে আসে কন্যা নুপুর। এমনিতেই অভাবের সংসার। তার ওপর নবাগত সন্তান। শেষ পর্যন্ত সংসার চালাতে স্বামী-স্ত্রী দুজনই বেছে নিয়েছেন প্রিয় দোতরা আর প্রেমজুড়ি। বিভিন্ন বাজারে গান গেয়ে যা পান, তা-ই দিয়ে চলে সংসার।

স্ত্রী সবুজ জান খাতুন ওরফে সাথী জানান, প্রতিদিন সকাল থেকেই তাদের পথ চলা। পথে পথে, চায়ের দোকানে, হাটবাজারে বা কোনো গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের গান শোনান তারা। দর্শকরা খুশি হয়ে যা দেয় তা দিয়েই সংসার চলে। খরচ যোগান মেয়ের পড়াশোনার। মেয়েকে একজন ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা এ দম্পতির। কিন্তু গান গেয়ে যা পান তা দিয়েই কোনো মতে সংসার চলে। ডাক্তার বানানোর শখ কি পূরুণ হবে এদের? তার পরও এরা খুশি কারণ, ভিক্ষা নয়, মানুষদের মনে আনন্দ দিয়ে টাকা উপার্জন করছেন। চালাচ্ছেন সংসার।

দেখা গেলে, গরমে গান গাইতে গিয়ে ঘেমে যাচ্ছেন পাপ্পু সরকার আর স্ত্রী ওড়না দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিচ্ছেন। আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন কোনটি গাইতে হবে। এদের মধ্যে যে ভালবাসা মায়া মমতার বাঁধন সেটি যেমন অটুট থাকে, সেই সাখে কোনো সহৃদয় ব্যক্তি যদি এ দম্পতির মেয়ের লেখা পড়ার দায়িত্ব নেন তাহলে হয়তো পরিবারটির স্বপ্ন পুরুণ হবে।