সীমাহীন দুর্নীতি হয়রানি ও ভোগান্তিতে গ্রাহক অসন্তোষ চরমে

 

জীবননগরে ঘুষ ছাড়া মিলছে না পল্ল¬ী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ

সালাউদ্দীন কাজল: ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, ঠিক সেই সময়ে জীবননগরে নতুন বিদ্যুত সংযোগকে ঘিরে মেহেরপুর পল¬ীবিদ্যুত সমিতির দর্শনা সাব-জোনাল অফিসে চলছে নৈরাজ্য। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে ছেয়ে গেছে পুরো অফিস। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন নতুন বিদ্যুত সংযোগ নিতে আসা এলাকার হাজারও গ্রাহক। বৈধ আবেদনকারীরা বছরের পর বছর এ অফিসে ধরনা দিয়েও নতুন সংযোগ পাচ্ছেন না। গ্রাহকদের অভিযোগ সমীক্ষা ফি, ওয়্যারিং পরিদর্শন, সিএমও (কনজুমার মিটার অর্ডার) করণ, জামানত ও ট্রান্সফরমারের ওভারলোডের নাম করে এবং আবেদন থেকে শুরু করে সংযোগ দেয়া পর্যন্ত নানা সমস্যা দেখিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সমিতির কতিপয় কর্মকর্তার নিয়োজিত প্রভাবশালী দালালচক্র। দালাল ব্যতিত কোনো গ্রাহক যদি কোনো সংযোগের জন্য আবেদন করেন, তাহলে  সে সংযোগ কখন মিলবে বা আদৌ মিলবে কি-না এমন প্রশ্ন এখন পল¬¬ী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ প্রত্যাশীদের। প্রতিটি মিটার সংযোগের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে সদস্য ফরম বাবদ ১শ টাকা ও মিটার বাবদ ৬৫০ টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও দালালরা গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার প্রতি ৮ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। আরিফ হোসেন, নুরুজ্জামান, আলিমসহ দালালচক্র কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুত সংযোগের নামে মিটার বাণিজ্য। যেসব গ্রাহক নির্দিষ্ট টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছে শুধু তাদের ভাগ্যেই জুটছে মিটার। যারা দালালচক্রের মন জোগাতে পারছে না, সেই সব গরিব মানুষের ঘরে বিদ্যুত যাচ্ছে না। অসাধু কর্মকর্তা ও দাদালচক্রের খপ্পরে পড়ে অফিসটি পরিণত হয়েছে দুর্নীতির আখড়ায়।

দর্শনা সাব-জোনাল অফিসে গিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবচেড়ে বড় অভিযোগ দালালদের দৌরাত্ম নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুত সংযোগের জন্য আবেদন করা হলেও সেটি মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ধরে ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকে। কিন্তু যারা দালালদের উপরি দিয়ে আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন, তারা সংযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।

গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুত সংযোগের আবেদন করার সময় কর্মকর্তারাই দালালদের নাম উল্লেখ করে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। দালাল ছাড়া বিদ্যুত সংযোগ পেয়েছেন, এমন গ্রাহক খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় অসহায় হয়ে গ্রাহকরা ওই দালালচক্রকে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি টাকা দিয়ে মিটার ও বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ ট্রান্সফরমার নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আগে আবেদন করা গ্রাহকদের আগে সংযোগ দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। উৎকোচের বিনিময়ে সদ্য আবেদনকারীদের সংযোগ দেয়া হচ্ছে আগে। এক-দেড় বছর পূর্বে আবেদনকারীরা সংযোগ না পেলেও এক সপ্তাহ আগে আবেদন করেও নতুন সংযোগ পেয়েছেন। এজন্য অবস্থা ভেদে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। এছাড়া পরিদর্শক ও বিলিং সুপারভাইজারসহ তাদের নিয়োজিত দালালদের হাতে অতিরিক্ত টাকা না দিলে আবেদনকারীদের সংযোগস্থলে বিদ্যুতের বাড়তি লোড রয়েছে বলে মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়া হয়। যাতে ওই গ্রাহক আরও বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য হন। দুর্ভোগ আর হয়রানির চরম শিকার আবেদনকারীরা উপায়ান্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সংযোগ নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

উপজেলার সেনেরেহুদা গ্রামের নাসির উদ্দীন জানান, আমার নিজ বাড়িতে নতুন একটি মিটারের জন্য আমি ৪ মাস পূর্বে উথলী এরিয়া অফিসের লাইনম্যান ফরিদ হোসেনের পোষা দালাল হাফিজুর রহমানের কাছে ৬ হাজার ৭শ টাকা দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিদ্যুতের সংযোগ পাইনি।

উথলী গ্রামের আমতলা পাড়ার আক্কাচ আলী জানান, এক সপ্তাহ আগে একটি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যাবার কারণে তা পরিবর্তনের জন্য ইলেকট্রিশিয়ান আহম্মেদ সগীরের মাধ্যমে লাইনম্যান ফরিদ হোসেনকে ১ হাজার ৭৫০ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। একই গ্রামের মিনাজুল হক জানান, আমি কামলা খেটে খায়। একদিন কামলা না খাটলে বাড়ির সবাইকে উপোষ থাকতে হয়। এ অবস্থায় আমি ধার-কর্জ করে নতুন একটা মিটারের জন্য ৬ মাস আগে আবেদন করি। আবেদন করার পর দর্শনা অফিসে আমাকে ৪ বার আসতে হয়েছে এবং অতিরিক্ত ৭৫০ টাকা দিতে হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা না দেয়া পর্যন্ত মিটার লাগানো হয়নি।