সিঙ্গাপুরে বসে বাংলাদেশ দখলের ছক আইএসের

 

স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরে বাংলাদেশ মুক্তির ছয় বছর আগে ১৯৬৫ সালে স্বাধীন সিঙ্গাপুর, আজ অন্যতম ধনী দেশ। গতিতে হাওয়া হার মানে।
প্রতিটি সেকেন্ড ডলারে মাপা। মাথাপিছু আয় ৫০,০৮৭ ডলার। সমীহ করে ইউরোপ-আমেরিকা। সেখানেও জায়গা করছে জঙ্গিরা। ছু্চ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোতে চাইছে।

আপাতত পা রাখা, তারপর দৌড়। তারা জানে, বিত্তবানদের দিয়ে হবে না। ধরতে হবে তাদের, জীবন যাদের নাগালের বাইরে। বেঁচে থাকাটা ব্যতিক্রম।
অর্থের লোভে সন্ত্রাসী লাইনে চলতে তাদের আপত্তি হবে না। ১৩ বাংলাদেশি সেই রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরে। তারা সাধারণ শ্রমিক। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।
অবৈধ বসবাসের জন্য ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। তাদের কোনো ছুটি ছিল না। কাজের হিসাব হতো ঘণ্টায়। কাজ করত নির্মাণকর্মী বা জাহাজশ্রমিকেরা দুদিন অন্তর কর্মস্থান বদল করে পরিচয় গোপন রাখত। একই অবস্থা আমেরিকায় মেক্সিকোর নির্মাণকর্মীদের। অবৈধভাবে বসবাসের দরুন তাদের মজুরি নামমাত্র।
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি টনি টান, প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েন লুং, দুজনেই উদ্বিগ্ন। সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্থিক দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশি শ্রমিকরা জঙ্গি ফাঁদে পা দিয়েছে। তাদের পাঁচজনকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকি ৮ জন দুই বছরের জন্য জেলে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আটককৃতরা সিঙ্গাপুরে ঢোকার আগে কোনোভাবেই জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। সিঙ্গাপুরেই তারা অন্ধকার রাস্তার খোঁজ পেয়েছে। সে পথে প্রবেশ করেছে বাধ্যবাধকতায়।
তাদের দায়িত্ব ছিল, বাংলাদেশে
ইসলামিক স্টেট অব বাংলাদেশ গঠন। যাদের প্রথম কাজ হবে শেখ হাসিনার সরকারকে ছুড়ে ফেলে সন্ত্রাসবাদকে স্থায়িত্ব দেয়া।
এত বড় কাজ তাদের মতো নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের সাধ্যের বাইরে জানত আইএস চক্র। তারা রাস্তাটা দেখাতে পারলেই খুশি হতো সন্ত্রাসী নেতৃত্ব।
তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছিলো সিডি আর বই। যা সন্ত্রাসী কাজে প্রেরণা হতে পারে।
অনলাইনে আইএসের কাজ দেখানো হতো। জঙ্গিদের মেলামেশার জায়গা ছিলো সিঙ্গাপুরের পার্ক।
আটককৃতদের মধ্যে অন্যতম মিজানুর রহমান স্বীকার করেছেন, ইসলামিক স্টেট অব বাংলাদেশ গঠন করেছিল তারা।
বাংলাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করে কাজ এগোনোর চেষ্টা হয়েছিল। টাকার কোনো অভাব ছিল না। সেটা সময়মতো তাদের হাতে পৌঁছে যেত।
সিঙ্গাপুর সরকার জানিয়েছে, এই প্রথম সন্ত্রাসীদের খোঁজ পাওয়া গেল। তারা যাতে ডালপালা মেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ্যে রাখা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে ৭৭ শতাংশ চীনা, ১৫ শতাংশ মালয়, ৬ শতাংশ ভারতীয়।
ভারতীয়দের মধ্যে তামিলদের প্রতিপত্তি যথেষ্ট। বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি। অন্য বিদেশি যারা থাকে তারা নির্দিষ্ট কাজে ব্যস্ত।
অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার সুযোগ বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঝুঁকে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের টার্গেট করেছিল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া।
তাদের দিয়েই বাংলাদেশে শিকড় ছড়ানোর ইচ্ছে ছিল। বাংলাদেশি শ্রমিকরা ঢাকা-সিঙ্গাপুরের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করত। বাংলাদেশে আইএস তৎপরতা আগে দেখা যায়নি।
আটক জঙ্গিদের কাছ থেকেই জানা যেতে পারে, সত্যিই তারা চারা পুঁততে পেরেছে কিনা।