সাংবাদিককে গুলি করা সেই পৌর মেয়র মীরু গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মীরুকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে ৯টায় রাজধানীর শ্যামলীর একটি বাসা থেকে ইন্সপেক্টর দীপক দাসের নেতৃত্বে একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের একটি টিম সাথে ছিলো। রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় তাকে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছিল। এর আগে সকালে মীরু ও কেএম নাসির উদ্দিনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। রোববার দুপুরে সংগঠনের জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুলকে হত্যা ও দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে দু’জনেরই প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।

এদিন পুলিশ মীরুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করেছে। শিমুলের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিকেলে প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজন করা হয় দোয়া মাহফিলের। সংবাদকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এতে শরিক হন। শিমুল হত্যার প্রতিবাদে রোববারও শাহজাদপুরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও। শিমুল হত্যার ঘটনায় শনিবার রাতে পুলিশ সাহেব আলী নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা ঠেকল নয়ে। শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল হক জানান, অসুস্থ থাকায় সাহেব আলীকে পুলিশ হেফাজতে সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতার পাঁচজনকে রোববার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এসআই কমল সিং জানান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক ১৩ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। এর আগে শনিবার আরেক আসামি মেয়র মীরুর ছোটভাই হাবিবুল হক মিন্টুকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে শিমুলের বাড়িতে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা ও এক লাখ টাকা অনুদান দেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রী শিমুলের স্ত্রী নূরুন নাহারকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মন্ত্রী জানান, শিমুলের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জেলা প্রশাসন থেকে বহন করা হবে।

রোববার সকাল ১০টায় নতুনমাটি এলাকার দলীয় কার্যালয়ে শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠক শুরু হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন এতে সভাপতিত্ব করেন। সাবেক এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমানসহ ৪৭ কার্যকরী সদস্য সভায় ছিলেন। মীরুর কর্মকাণ্ড নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন তারা। বহিষ্কারের জোর দাবি জানান। চয়ন ইসলাম বলেন, এক সময়ের চরমপন্থি নেতা হালিমুল হক মীরুকে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না। সভা শেষে মীরু ও নাসিরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান হাসিবুর রহমান স্বপন।

তিনি বলেন, দলবিরোধী বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও সমকাল সাংবাদিক শিমুলকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এ কারণে তাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া মীরুসহ শিমুল হত্যার অন্য আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বপন আরও জানান, আমরা আজই আমাদের সিদ্ধান্ত জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেব। মেয়র মীরু জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও। তার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের চিঠি পেয়েছেন কিনা- এসব জানতে যুগান্তর যোগাযোগ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গে। কিন্তু বহুবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে রয়েছেন।

শাহজাদপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল বিকালে মনিরামপুরে মেয়র মীরুর বাড়িতে অভিযান চালায়। দলে ছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কমল দেবনাথও। পরে মনিরুল ইসলাম জানান, মেয়রের বাসা থেকে তার দু’টি পাসপোর্ট বই, জাতীয় পরিচয়পত্র ও তিনটি চেকবই জব্দ করা হয়েছে। তিনি যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্যই এসব জব্দ করা হয়। মনিরুল আরো জানান, মেয়রের অবস্থান নিশ্চিত হতে বাড়িটিকে পুলিশ বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে।
শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল হক জানান, অভিযানের সময় মীরুর স্ত্রী শাহজাদপুর মওলানা সাইফুদ্দিন এহিয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী শিক্ষক জেবুন্নেসা বেগম পিয়ারী সেখানে ছিলেন। এর আগে বৃহস্পতিবার মীরুর লাইসেন্স করা একটি শটগান, একটি ব্যবহৃত গুলির খোসা এবং ৪৩ রাউন্ড তাজা গুলি জব্দ করে পুলিশ। রোববার যাদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত কেএম নাসির উদ্দিন, বারাবেরি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন, নলুয়া গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে আরশাদ আলী ভুঁইয়া, আবদুল মতিনের ছেলে নাজমুল ও শক্তিপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে জহির উদ্দিন শেখ।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে তুলে এনে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় মেয়র মীরুর ভাই হাসিবুল হক পিন্টু ও হাবিবুল হক মিন্টু। এ নিয়ে বিজয়ের ছাত্রলীগ কর্মীরা মেয়রের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় পৌর মেয়র শটগান দিয়ে গুলি ছোড়েন। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এদের একজন শিমুল বগুড়া থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে শুক্রবার মারা যান। এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী মোছা. নূরুন নাহার বাদী হয়ে পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরুকে প্রধান আসামি ও ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।