সংঘাত ও সমঝোতার প্রস্তুতি : সমাবেশ নিয়ে শঙ্কা উত্কণ্ঠা

যেকোনো মূল্যে সমাবেশ হবেই : বিএনপি : অঘোষিত জরুরি অবস্থা! র‌্যাব-পুলিশে সতর্কতা : বিজিবি চেয়ে চিঠি

 

স্টাফ রিপোর্টার: যেকোনো পরিস্থিতিতে আগামীকাল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট। এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারাও বলছেন, রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে কাউকেই কোনো ধরনের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সমাবেশ করতে চেয়েছিলো। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আর বাধার মধ্যেই সমাবেশ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে শঙ্কা আর উত্কণ্ঠা। কী হবে আগামীকাল? আবারও কী রাজনৈতিক নেতাদের বাকযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত রাজপথের যুদ্ধে পরিণত হতে যাচ্ছে? গোটা দেশজুড়ে এখন চলছে এসব আলোচনা আর সমালোচনা।

সমঝোতার প্রচেষ্টা, প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব। তবে রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে উল্টো আলামত। ঢাকার পর সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো চট্টগ্রাম ও বরিশালেও। আজ থেকে কার্যকর হবে এ নিষেধাজ্ঞা। দেশের অন্য প্রধান শহরগুলোতেও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা হবে শিগগিরই। এ যেন এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পাকড়াও অভিযান। রাজধানীর পল্টনে অভিযান চলেছে জামায়াত-শিবির অফিসে। প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮ দলীয় জোটের কয়েকজন কর্মীকে। অভিযান চলেছে ঢাকার আরও কয়েকটি স্থানে। মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আহসান উল্লাহ হাসানকে। দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় চলছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান। বিরোধীদলের শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এ অভিযানে। যেকোনো মুহূর্তে মোতায়েন করা হবে বিজিবি।

অনেকের অভিমত, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই একটা সমাধান খুঁজে বের করার তাগিদ তাদের। জান-মালের ক্ষতি, সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ দেখে রাজনীতির ওপরই বিরক্ত হচ্ছেন তারা। তারপরও মানুষের বিশ্বাস, রাজনৈতিক নেতারাই খুঁজে বের করবেন একটা সমাধান। হরতাল-অবরোধের বেড়াজালে পড়তে হবে না দেশবাসীকে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট বলেছে, আগামীকাল ২৫ অক্টোবর যেকোনো পরিস্থিতিতেই রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে তারা। তাই রাজনৈতিক সংলাপের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে সভা-সমাবেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন জোটের নেতারা। গতকাল বুধবার গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

১৮ দলের ঢাকার সমাবেশে নাশকতা সৃষ্টি হতে পারে বলে সরকারের মন্ত্রীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। মির্জা আলমগীর বলেন, ২৫ তারিখ বেলা ২টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। আমরা আশা করবো, সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেবে। মির্জা আলমগীর বলেন, সরকার সারাদেশে গণগ্রেফতার চালিয়েছে। গত কয়েকদিনে কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৮ দলের কয়েকশ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। এছাড়া বিভিন্ন মাদরাসা ও ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ। এসব করে জনগণের সংগ্রাম স্তিমিত করা যাবে না।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্মমহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ তৈয়ব, কল্যাণপার্টির মহাসচিব আব্দুল মালেক চৌধুরী, এনডিপির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, এনপিপির মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবারপার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, জাগপা মহাসচিব খন্দকার লুত্ফর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাহিনুর পাশা চৌধুরী, মুসলীম লীগের মহাসচিব আতিকুল ইসলাম, ভাসানী ন্যাপের খালেদ শাহরিয়ার উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা: ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঠ দখলের রণ প্রস্তুতিতে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সকল ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে সিএমপি থেকে জানানো হয়। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহিম হোসেন বাবুল জানান, তারা সভা করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন। অপরদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, তাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিসমূহ যথারীতি চলবে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করেছে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। গতকাল বুধবার বিকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।

এদিকে ২৫ অক্টোবর বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউনহলস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি সমাবেশের অনুমতি চাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণা দিলে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে পুলিশ।
খুলনার মাঠ দখলে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ-বিএনপি: ২৫ অক্টোবর খুলনার রাজপথ দখলে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আগামীকাল শনিবার সকাল থেকেই খুলনা মহানগরীসহ জেলার নয় উপজেলায় সভা-সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। এ কর্মসূচি সফল করতে নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া যেকোনো মূল্যে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সারা দেশে মুখোমুখি দুই জোট: সারাদেশে রাজপথ দখলে রাখার প্রস্তুতি দু জোটে। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘোষণায় উত্তাপ রাজনৈতিক অঙ্গনে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দুই জোট। প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে পাল্টাপাল্টি। জেলায় জেলায় কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি তারা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে উভয় জোট। রাজপথ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্য জেলা শহরগুলোতে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চলছে রণপ্রস্তুতি। টানটান উত্তেজনায় রয়েছে উভয় জোটের নেতাকর্মীরা। দুই জোটের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।