ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বেতন দিতে হবে ৯৭ ভাগ শিক্ষার্থীকে!

 

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এখন বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষায় যোগ করা হলো আরো তিন শ্রেণি। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম এই তিন শ্রেণিতে পড়ছে ৭০ লাখ শিক্ষার্থী, প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নেয়া হলেও এর মধ্যে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতিমাসে টিউশন ফি গুনতে হবে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হলে অন্য সব শ্রেণির মতো ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও অবৈতনিক শিক্ষার দাবিদার। অভিভাবকদের বক্তব্য, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিকের কথা বলা হলেও এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিউশন ফি দিতে হবে। তাহলে একে অবৈতনিক বলা হবে কেন?

অভিভাবকরা আরো বলছেন, একটি রাষ্ট্রের নাগরিকের শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রধান ও একমাত্র কর্তৃপক্ষ হলো সরকার। সংবিধানে উল্লেখ আছে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, তাই সরকার কোনোভাবেই প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়ভার অন্য কোনো পক্ষের ওপর চাপিয়ে দিতে বা দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারে না। আবার ১৯৯০-এর আইনের ন্যূনতম অঙ্গীকার হচ্ছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রাথমিক শিক্ষায় কোনো ফি লাগবে না এবং ক্রমান্বয়ে সর্বস্তরে অবৈতনিক শিক্ষা চালু করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে । তথ্য অনুযায়ী, দেশের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পড়ানো হয় এমন সরকারি স্কুল ৩২৩টি। এসব স্কুলে ওই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার। অন্যদিকে দেশে বেসরকারি ১৯ হাজার ৪৭টি স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে ওই তিন শ্রেণিতে পড়ছে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। যাদের সবাইকেই প্রতিমাসে টিউশন ফি এখন দিতে হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হলেও টিউশন ফি দিতে হবে তাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে যেসব বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে, তাদেরও টিউশন ফি গুনতে হচ্ছে। অবৈতনিকের সুবিধা পাচ্ছে শুধু সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তাই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন শুরু হলেও তাদের টিউশন ফি গুনতে হবে।

তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে ২ হাজার ৫৯৪টি প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। যাতে ৬ লাখ ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়ছে। প্রাথমিক শিক্ষায় পড়লেও এসব শিক্ষার্থীদের নিয়মিত টিউশন ফি দিতে হয়। জাতীয়করণ করা হলেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অবৈতনিক সুবিধা পাবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন খালিদ বলেছেন, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। এই তিনটি শ্রেণিতে মোট কত শিক্ষার্থী পড়ছে এ বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে কীভাবে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া যায় সরকার সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছে। সব কিছুই হবে, তবে ধীরে ধীরে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ বলেন, এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত হবে।