শৈলকুপায় নৃশংসভাবে তিন শিশু হত্যার এক মাস

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: সময়টা যেনো একদম কাটে না। বদ্ধ ঘরে একা একা বসে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে। সারাক্ষণ মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিন ঘর জুড়ে খেলা করে বেড়াতো। কিন্তু বাড়িতে আর কোনো শিশু নেই। তাই সারাক্ষণ শুধু ওদের কথা মনে পড়ে।
শৈলকূপা শহরের ভাড়াটে বাসায় বসে দুই ছেলের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে মা শিউলী বেগম হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহের চাঞ্চল্যকর তিন শিশু মোস্তফা সাফিন ও তার ছোট ভাই মোস্তফা আমিনের নৃশংস হত্যার এক মাস পুর্ন হলো। আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাদের ফুফাতো ভাই মাহিন নিহতের এক মাস পূর্ণ হবে। এই তিন শিশুর পরিবারে এখনো শোকের ছায়া মাতম চলছে। কোন ভাবেই তাদের স্বজনরা তিন শিশুকে ভুলতে পারছেন না।
সাফিন ও মাহিনের মা শিউলী বেগম ছেলেদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সারাদিন খাওয়া উঠা বসার সময় ওদের কথা মনে হয়। সকালে উঠেই ছোট ছেলে আমিনের কথা মনে হয় বেশি। এবার ৩০০ নাম্বারের মধ্যে ২৯২ নাম্বর পেয়ে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল তার ছোট ছেলে।
প্রতিদিন সকালে আমিনকে ডাকতে দেরী হলে বলত আম্মু কেন আমাকে দেরীতে ডাকলে, তুমি জাননা আমি নামাজ পড়ব, কুরআন শিখতে যাব, এরপর স্কুলে যাব। আমিন স্কুল থেকে এসে প্রাইভেট পড়ত। সংসারিক কাজেও সে আমাকে প্রচুর সহযোগিতা করত।
সারাদিন সারাক্ষণ ঘর জুড়ে এটা ওটা করে বেড়াতো। ওরা ১৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা সফরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর হলো না। সাফিন আর আমিন বেঁচে থাকলে সারাদিন যেন আমার কাজই শেষ হতো না। এখন আর সময় কাটতেই চাইনা। রান্না করা ছাড়া এখানে আমার আর কোন কাজ নাই বলে যোগ করেন শিউলী বেগম।
নিহত শিশুদের বাবা স্কুল শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোন কাজেই এখন আর মন বসে না। সকালে স্কুলে যাই, ফিরে এসে নিজের দোকানে বসি। তারপরও সময় কাটতেই চায় না। স্কুলের শিক্ষা সফরেও আমার যেতে ইচ্ছা করছে না। দুই ছেলের মৃত্যু আমি কোন ভাবেই ভুলতে পারছিনা।

তিনি আরো জানান, গত ১৫ জানুয়ারি শৈলকূপা পৌরসভার কবিরপুর মসজিদ পাড়ায় নৃশংস সাক্ষী সেই বাড়িটি ছেড়ে দিয়ে নতুন বাড়িতে উঠি। নিহত শিশু মাহিন, মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিনের স্মৃতি বিজড়িত হলেও নৃশংসতার সাক্ষী হওয়ায় ওই বাড়িতে এখন আর কেও থাকতে চান না। এজন্য ওই বাড়িটি ছেড়ে শৈলকূপা শহরের পাইলট স্কুল পাড়ায় চার হাজার টাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন তাদের পরিবার। এই বাড়িতে সাফিন ও আমিনের বাবা মা ছাড়াও দাদা দাদি বসবাস করছেন।

উল্লেখ্য গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পারিবারিক কলহের জের ধরে কবিরপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন তার ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে মোস্তফা সাফিন (৯) ও মোস্তফা আমিন (৭) এবং ভাগ্নে মাহিমকে (১২) ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়।এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই দুই ভাতিজা ও পরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মারা যায় ভাগ্নে মাহিম।

এ ঘটনায় নিহত দুই শিশুর বাবা দেলোয়ার হোসেন তার বড় ভাই ইকবালকে আসামি করে শৈলকূপা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ঘাতক ইকবাল ঘটনার দুই দিন পর আদালতে তিন শিশু হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক এর সত্যতা স্বীকার করেন।