শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে হতাশা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স পাস করে তিন বার বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও চাকরি পাননি সাইফুল আলম। ক্যাডার না পেলেও নন-ক্যাডারের কোনো পদে নিয়োগ পাবেন এমন আশা ছিল তার। এর মধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়সও শেষ হয়ে যায়। অবশেষে সোনার হরিণ সরকারি চাকরির পেছনে ছোটা বাদ দিয়ে এক আত্মীয়ের সুপারিশে একটি কোম্পানির বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন। অন্যদিকে ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৭০ জনকে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছিলো সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কিন্তু ২২ মাস পরও তারা দ্বিতীয় শ্রেণির এই পদে নিয়োগ না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএসএস) তথ্য অনুযায়ী দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের হার বেশি। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর, অধিদফতরে শূন্য পদ রয়েছে তিন লাখ ৯ হাজার ৫৯১টি। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। শূন্যপদ পূরণে প্রধানমন্ত্রী বারবার তাগিদ দিলেও লালফিতার দৌরাত্ম্য কমছে না। সর্বশেষ সচিবসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রশাসন সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কী ব্যাপার, দিন দিনই শূন্য পদ বাড়ছে কেন? দ্রুত শূন্য পদ পূরণ করুন।

জানা গেছে, ১০ হাজারের বেশি করে শূন্য পদ রয়েছে ৯টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগে। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দফতরে ৬৪ হাজার ১১০টি পদ শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শূন্য পদের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৮৫৫। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২৬ হাজার ১১টি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার একটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ১৩ হাজার ৪০২টি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৫৩৪টি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ১০ হাজার ৮৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এসব শূন্য পদের বেশির ভাগই নন-ক্যাডার নবম, দশম ও একাদশ থেকে ২০তম গ্রেডের তথা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। আর ওই সব গ্রেড বা শ্রেণির সব শূন্য পদেই নিয়োগ আটকে আছে বিধিমালার অভাবে। বছরের পর বছর এসব পদ শূন্য থাকায় দেশে বেকার সমস্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে সরকারের সেবা থেকে।

এ প্রসঙ্গে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, বিসিএস উত্তীর্ণদের সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থীকে নিয়োগে সুপারিশ করতে চায় কমিশন। এ জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে শূন্য পদের চাহিদা পাঠাতে বারবার তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর চাহিদা না পাওয়ায় কমিশন নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে না। তবে শূন্য পদ পূরণে সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা রয়েছে উল্লেখ করে ড. সাদিক বলেন, পদ পূরণে কোটার শর্ত শিথিল তা প্রমাণ করে।

২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট পিএসসি ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৭০ জনকে খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে। ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ অপর যে ৯১২ জনকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল পিএসসি, তারা সবাই নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু খাদ্য পরিদর্শকের ১৫০টি পদ এখনো শূন্য থাকলেও তারা নিয়োগ পাচ্ছেন না। নিয়োগ পেতে মন্ত্রণালয় আর অধিদফতরে ঘোরাঘুরি করছেন। খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন নিয়োগ বিধিমালা না হওয়ায় এই নিয়োগ ঝুলে আছে। তবে প্রার্থীরা বলছেন, নিয়োগ বিধিমালা না থাকলেও একই সময়ে পিএসসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাইফার কর্মকর্তা পদে যাদের সুপারিশ করেছিল, তারা তো নিয়োগ পেয়েছেন। তাই তাদেরও নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। এ মন্ত্রণালয়ে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বেশি। কিছু নিয়োগপ্রত্যাশী প্রার্থী খাদ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োগের অগ্রগতি জানতে গেলে তাদের আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়ার বিষয়টি জানান। সেই ফাইল এখনো অনুমোদন হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা এক প্রার্থী মুঠোফোনে বলেন, নিয়োগের সুপারিশ হওয়ায় ভেবেছিলাম দ্রুত চাকরিতে যোগ দিয়ে পরিবারের হাল ধরব। কিন্তু এখনো পরিবারের বোঝা হয়ে আছি। চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে আসছে। সুপারিশ পেয়েও প্রায় দুই বছর ধরে বেকার জীবন কাটাতে হচ্ছে। এটা যন্ত্রণার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, যুবকরা যেই বয়সটায় সবচেয়ে প্রাণচঞ্চল থাকে তা হচ্ছে ২১ থেকে ৩০ বছর। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়ে এই সময়টায় কর্মস্থলে প্রবেশের সবচেয়ে ভালো সময়। কিন্তু চাকরি পাওয়ার দুরূহ পদ্ধতিতে বড় একটি সময় নষ্ট হয়। এতে করে দেশ ও জাতি মেধাবীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এটি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি প্রতিবন্ধক বলে তিনি মনে করেন।