সরকারি চাকরির ১৮ শতাংশ পদ ফাঁকা

স্টাফ রিপোর্টার: পাল্লা দিয়ে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বাড়লেও দেশে কেবল সরকারি চাকরিতেই ৩ লাখ ২ হাজার ৯০৪টি পদ ফাঁকা পড়ে আছে, যা মোট পদের ১৮ শতাংশের বেশি। ফাঁকা পদগুলোর মধ্যে ৩৯ হাজার ৫৬৪টি প্রথম শ্রেণির, ৩০ হাজার ৪২২টি দ্বিতীয় শ্রেণির, এক লাখ ৬৩ হাজার ৪১৭টি তৃতীয় শ্রেণির এবং চতুর্থ শ্রেণির পদ ৬৯ হাজার ৫০১টি।
মন্ত্রণালয়গুলোর তৎপরতার অভাবেই এসব পদ ফাঁকা রয়েছে বলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ।
অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলছেন, সরকারি পদে কখনই নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা শতভাগ পূরণ হয়নি। ফাঁকা পদ পূরণে সরকার কিছু উদ্যোগ এর মধ্যেই নিয়েছে। সরকার অনুমোদিত ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৩৪২টি পদের বিপরীতে বর্তমানে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৮ জন কর্মরত আছেন, যার ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ নারী।
জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৩ হাজার ১২০টি এবং অধিদফতর ও পরিদফতরে এক লাখ ৯৮ হাজার ১৬টি পদ ফাঁকা রয়েছে।
আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১০ হাজার ৪৪৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে ৯১ হাজার ৪১৯টি পদ। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির এক লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৩৯ হাজার ৮১৭ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির এক লাখ ৭৩ হাজার ১৮৫টি পদের বিপরীতে এক লাখ ৪২ হাজার ৭৬৩ জন। তৃতীয় শ্রেণির ১০ লাখ ২ হাজার ৪০৯টি পদের বিপরীতে আট লাখ ৩৮ হাজার ৯৯২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৬৭টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬৬ জন কর্মরত।
সরকারের ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৮ জন কর্মচারীর মধ্যে ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ নারী, সংখ্যার হিসেবে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৮১ জন। নারী কর্মচারীদের ২৩ হাজার ৬৩৭ জন প্রথম শ্রেণির, ৫৩ হাজার ৪১ জন দ্বিতীয় শ্রেণির, ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ জন তৃতীয় শ্রেণির এবং ৪৭ হাজার ৯১ জন চতুর্থ শ্রেণির।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার জন্যই ৩ লাখ পদ ফাঁকা পড়ে আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলোতে সরকারি কর্ম কমিশন নিয়োগ দেয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী শুক্রবার বলেন, সব সময়ই সরকারি পদ কম-বেশি ফাঁকা থাকে। সরকারের অনেকগুলো বিভাগ। সব সময়ই কেউ না কেউ অবসরে যাচ্ছেন, নতুন নিয়োগ হচ্ছে। কখনই নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা শতভাগে যায় না। তবে দীর্ঘ দিন ধরে যেন কোনো পদ যেন ফাঁকা পড়ে না থাকে সে বিষয়ে সরকারের নজর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কোটাভিত্তিক পদগুলোই বেশি ফাঁকা রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ফাঁকা পদগুলো দ্রুততার সাথে পূরণে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কোটায় নিয়োগে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় সরকার বিশেষ বিসিএস নিয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ দিতে আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতি কোটা এবং পেশাগত ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসের ৭৯২টি পদ খালি থাকে। গত ২১, ২২ ও ২৫তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত কোটার যথাক্রমে ১০ দশমিক ৮, ২ দশমিক ২ ও ৫ দশমিক ২ ভাগ পূর্ণ হয়। আর ২৮তম বিসিএসে পেশাগত ও কারিগরি ক্যাডারে বিভিন্ন কোটায় ৮১৩টি পদের জন্য কোনো যোগ্য প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। পরে এসব পদে নিয়োগ দিতে ৩২তম বিশেষ বিসিএস হয়। এর আগেও ২০০০ সালে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নেয়া হয়েছিলো।
২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। তবে অধ্যাদেশ জারির কারণে তা ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। ২০১১ সালের শেষে সরকারি কর্মচারীদের চাকরির বসয় বাড়ার ফলে গত ৩ বছরে অল্প সংখ্যক সরকারি চাকুরে অবসরে গেছেন। ফলে প্রবেশপদে লাখ লাখ প্রার্থী সরকারি চাকরি নামক ‘সোনার হরিণের’ সন্ধানে রয়েছেন, দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। এর প্রমাণ মেলে গত দুটি বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যার পর্যালোচনা করে।
৩৫তম বিসিএসে একটি পদের জন্য ১৩৫ জন এবং ৩৪তম বিসিএসে একটি পদের বিপরীতে ১০৭ জন চাকরি প্রার্থী আবেদন করেন। ৩৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন এবং ৩৪তম বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিলো ২ লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ জন।