শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে গাংনীতে মতবিনিমসভায় ড. মোকলেছুর

 

ব্যক্তি পরিবর্তন হলে সমাজ পরিবর্তন হবে

মাজেদুল হক মানিক: জাপান ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক্সের অধ্যাপক গাংনীর কৃতীসন্তান ড. মোকলেছুর রহমান শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেছেন, সরকারি সময়সূচি অনুযায়ী শিক্ষকদেরকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত ও প্রস্থান করতে হবে। তাহলে ছাত্রছাত্রীরাও ক্লাসের শেষ সময় পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে। আইন মানার আগে নৈতিক পরিবর্তন আনতে হবে। গোটা সমাজ ও দেশকে একদিনে পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু স্ব স্ব অবস্থান থেকে আগে পরিবর্তন হতে হবে। তাহলে একদিন সবাই পরিবর্তনের কাতারে সামিল হবে। ভালো কাজ কখনো থেমে থাকে না, বিফলেও যায় না। শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সমন্বিত উদ্যোগেই শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত হবে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন নিয়ে গতকাল সোমবার রাতে গাংনীতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলমের উদ্যোগে তার নিজ চেম্বারে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বক্তব্যে উঠে আসে শিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন সমস্যা ও তা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ এবং যুক্তিকতা। প্রাইভেট ও কোচিং আগ্রাসন, নড়বড়ে পরিচালনা পর্যদ, যোগ্য শিক্ষক ও মানসিকতার অভাব, স্বাধীন কাজকর্মে বাধা এবং অভিভাবকদের অনীহার বিষয়টি উঠে আসে। উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখাতে কর্মমুখি শিক্ষার ওপর জোরারোপ করেন অনেকেই।

বক্তব্যে একেএম শফিকুল আলম বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের সফলতা ও বিফলতা নিয়ে তেমন পর্যালোচনা করে না। আবার মানোন্নয়নের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান প্রধানের শক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে টিকে থাকার মতো পরিবেশও নেই। অন্যদিকে কমিটি ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ তো বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে। তাছাড়া অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মাঝে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নের অভাব রয়েছে। ফলে অনেক সম্ভাবনাময়ী ছাত্রছাত্রীও তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

গাংনী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক রফিকুর রশিদ রিজভী বলেন, রাজনীতিবিদদের হাতেই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একে অপরেরর ওপর দোষ চাপানের ফলে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে যাচ্ছে। তাই এ দুয়ের মধ্যে আগে দরকার সমন্বয়। পলিটেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, দক্ষ শিক্ষকের অভাব ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মানসিকতার কারণে কর্মমুখি শিক্ষায় তেমন কিছুই শেখানো হচ্ছে না। দেয়া হচ্ছে শুধু মাত্র একটি সার্টিফিকেট। এর চেয়ে একটি ওয়েল্ডিং দোকানের কর্মচারী ভালো শিক্ষা নেয়।

প্রাইভেট ও কোচিং ব্যবসার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ও গাংনী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাস সময়ের আগ পর্যন্ত প্রাইভেট চলে। এতে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসের প্রতি আর মনোযোগ থাকে না। তাই বিদ্যালয়ের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে পাইভেট বন্ধে সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।

জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানকে নিজ গতিতে চলতে দিলে ভালো ফলাফল অবশ্যই হবে। বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রশিদ, গাংনী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ খোরশেদ আলী, শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের সহসভাপতি ইয়াছিন রেজা, সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, তেরাইল জোড়পুকুরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, আযন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হামিজ উদ্দীন, সন্ধানী সংস্থার পরিচালক আবু জাফর, সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান প্রমুখ।