লোকবল অভাবে মেহেরপুর হাসপতালে নষ্ট হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্যবান যন্ত্রপাতি

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের মেডিকেল যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর, আলট্রাসনোগ্রাফি ও অপারেটিং মাইক্রোসস্কোপ (চক্ষু) থাকলেও তা পরিচালনার জন্য দীর্ঘদিন থেকে কোনো জনবল নেই। ফলে রোগীরা বেশি অর্থ দিয়ে বাইরে থেকে এসব সেবা নিচ্ছেন। আর হাসপাতাল হারাচ্ছে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব আয়।

Meherpur hospital Instruments pic_(2)

হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে এডিবি স্বাস্থ্য প্রকল্প থেকে দেশের যে চারটি জেনারেল হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয় তার একটি হচ্ছে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। সার্বক্ষণিক বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০০১ সালের ১ জানুয়ার এখানে দেয়া হয় (আইএজে ইউকে তৈরী) একটি ৬০ কেভিএ অত্যাধুনিক জেনারেটর। কিন্তু অপারেটর ও জ্বালানি বরাদ্দ না থাকায় তা চালু করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থেকে বর্তমানে এটি বিকল রয়েছে। একই প্রকল্প থেকে ২০০২ সালের ১৮ জুন চক্ষু পরীক্ষার অত্যাধুনিক যন্ত্র স্লিটল্যাম্প দেয়া হয়। আর ২০০৬ সালের ২৪ জুন কেন্দ্রীয় ওষুধ ভাণ্ডার (সিএমএসডি) থেকে দেয়া হয় চোখের গুরুত্বপুর্ণ অস্ত্রোপচারের জন্য অত্যাধুনিক অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ (চক্ষু)। এর সেবা দেয়ার জন্য কনসালটেন্ট (চক্ষু) পদ থাকলেও দীর্ঘ আট বছর ধরে তা শূন্য ছিলো। গেল সেপ্টেম্বর মাসে একজন কনসালটেন্ট (চক্ষু) যোগদান করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ বিকল রয়েছে। এতে চোখের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। এ সেবা নিতে মেহেরপুরের মানুষের রাজশাহী কিংবা ঢাকা শহরে যেতে হচ্ছে।

এদিকে রোগীদের স্বল্প মূল্যে আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার লক্ষ্যে এডিবি স্বাস্থ্য প্রকল্প থেকে ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাপানের নাতাশা কোম্পানির তৈরি দুটি আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্র পায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। চালু ছিলো বেশ কয়েক বছর। হাসপাতালে রেডিওলজিষ্ট ও রেডিওলজিষ্ট (কনসালটেন্ট) পদ থাকলেও দীর্ঘ দশ বছর ধরে দুটি পদই শূন্য। কিন্তু ব্যবহার না হওয়ায় ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি দুটিই বিকল ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

Meherpur hospital Instruments pic_(4)

হাসপাতালসুত্রে আরো জানা গেছে, এক্স-রে ও প্যাথলজিসহ পরীক্ষা নিরিক্ষার যে যন্ত্রপাতিগুলো চালু আছে তাতে প্রতি বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আয় হয়। বিকল হওয়া যন্ত্রপাতিগুলো চালু হলে এ আয় দ্বিগুন হবে বলে হাসপাতালসুত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে স্বল্প মুল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চোখের গুরুত্বপুর্ণ অস্ত্রোপচারসহ সব চিকিৎসা সেবা মেহেরপুরেই পাবেন রোগীরা।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. তাপস কুমার সরকার জানিয়েছেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতালের পরীক্ষা সেবা থেকে যা আয় হয় তা রাজস্ব হিসেবে জমা দেয়া হয়। এ থেকে খরচ করার বিধান নেই। কিন্তু জেনারেটর চালানোর জ্বালানি তেল (ডিজেল) বরাদ্দের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাছাড়া জনবল অভাবে অন্যান্য মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো অকেজো হয়েছে। প্রতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রেরণ করা প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো উল্লেখ্য করা হয়েছে। গেল সেপ্টেম্বর মাসে ন্যাশনাল ইন্সিটিউট অব ইলেকট্রো মেডিকেল ইন্সুট্রুমেন্ট (নিমিইউ) কার্যালয়ে যন্ত্রপাতিগুলো মেরামতের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।