লালন শাহ্‌র ১২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী বুধবার

 

image_58307_0মাথাভাঙ্গা অনলাইন : কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বরাবরের মতো পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে লালন একাডেমি।

 অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আগামী ১৬ অক্টোবর বুধবার, বাংলায় পহেলা কার্তিক থেকে।
 ১৬ তারিখে উদ্বোধনের কথা থাকলেও ওইদিন পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে উদ্বোধন হচ্ছে না। তবে সন্ধ্যায় লালন একাডেমির শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে বলে জানা গেছে।
 ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ফকির লালন শাহর ১২৩তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
 সভাপতিত্ব করবেন লালন একাডেমির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। দীর্ঘদিন পর এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফরিদা পারভীন সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রেজানুর রহমান খান চৌধুরী মুকুল।
 সমাপনী দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহাবুব-উল আলম হানিফ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
 পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে থাকছে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা, পাঁচ দিনব্যাপী গ্রামীণমেলা এবং লালনের শিল্পীদের পরিবেশনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান।
 ১৮৯০ সালে ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার শহরতলী কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে তার এই এলাকায় তিরোধান দিবস পালিত হয়ে আসছে।
দেশি-বিদেশি অসংখ্য লালনের ভক্ত-অনুসারীরা প্রতিবার উৎসবে আসেন। ভক্তরা প্রথমে তাদের ধর্মগুরু লালন শাহের কবরে বিশেষ ভঙ্গিতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। জাত, বংশ, ধর্ম, গোত্র ভুলে উৎসবে আসা প্রত্যেকে একে অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময় করেন।
 লালন উৎসব উপলক্ষে কালী নদীর পাড় ঘেঁষে দেশীয় হস্তশিল্পের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের মেলা বসে। ইতোমধ্যে এই আয়োজনকে ঘিরে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
লালন একাডেমি ১৯৯০ সাল থেকে লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবসে মেলা, সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও পয়লা কার্তিক থেকে অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে।
 একাডেমি সূত্র জানিয়েছে, এবারের আয়োজনে সারাদেশের লালনের সাধু অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন- দীক্ষাগুরু ও স্থানীয় সাধু। প্রতি সাধুর সঙ্গে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন সঙ্গী থাকবেন।
 এছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, ফ্রান্স, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সাধুসন্ত ও লোকসংস্কৃতির অনুরাগীরা এবারের আয়োজনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। সারা দেশ থেকে লালন সাঁইয়ের বিপুলসংখ্যক ভক্ত ও অনুসারী সমবেত হবেন ছেঁউড়িয়ায়।
 উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দীক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথপ্রদর্শক হিসেবে বাউল সম্রাট লালন শাহর আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা মত থাকলেও নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় লালন ফকির ১৭৭৪ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের ভাঁড়রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
 তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসংগতির কারণে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। যৌবনকালে পূণ্য লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে একজন মুসলমানের ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এরপরে তিনি সাধক ফকির হন।