যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পণ্যের আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোবাইল সিম ও রিম, ওয়াশিং মেশিন, এয়ারকুলার, ট্রান্সফরমার, ইউপিএস, আইপিএস, সিগারেট তৈরির যন্ত্রপাতি, বিড়ি-সিগারেট, গুল, জর্দা, তামাকজাত পণ্য, হাতে তৈরি বিস্কুট, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, বায়োমেট্রিক স্ক্যানার ও এলপিজি সিলিন্ডার ইত্যাদি।

এবারের বাজেটে সিম বা রিম কার্ডের মাধ্যমে সেবার ওপর বিদ্যমান তিন শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে মোবাইলফোন গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে। সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক হার বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া সিগারেট পেপার ও সিগারেট উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে আগামীতে সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে সস্তা দামের সিগারেটের। কারণ নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিম্নমানের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন দাম ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন। একই সাথে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক হার ৪৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা এবং এর ঊর্ধ্বৈ যে দুটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান আছে সেটি ৬১ এবং ৬৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬২ ও ৬৪ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন তিনি। বিড়ি-সিগারেটের মতোই আরেকটি ভয়াবহ পণ্য জর্দা ও গুল। জর্দা ও গুলের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে এ পণ্য দুটির ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার ৬০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০০ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি। বর্তমানে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ির বাজারজাত মূল্য হলো ৭ টাকা ৬ পয়সা আর ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার বিড়ির প্রতি প্যাকেটের মূল্য হলো ৭ টাকা ৯৮ পয়সা। দুই ধরনের বিড়ির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার যথাক্রমে ২৫ ও ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেন তিনি। এছাড়া ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার প্যাকেটের দাম হবে সাড়ে ১০ টাকা আর ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার প্যাকেটের দাম হবে ১২ টাকা। বাড়তে পারে বিয়ার ও মদের দাম।

এছাড়া ওয়াশিং মেশিনের আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বিগত দিনে ট্রলিব্যাগ, স্যুটকেস, ট্রাভেলব্যাগ আমদানিতে সুনির্দিষ্ট এইচএস কোড ছিলো না। এর ফলে এসব পণ্য আমদানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী বাজেটে এসব পণ্যের এইচএস কোড (৮৩.০২) নির্ধারণ করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। আগামী বাজেটে প্রতিকেজি আমদানি করা চায়ের ট্যারিফ মূল্য ২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে আমদানি করা চায়ের দাম বাড়তে পারে। যদিও চা উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই দেশি শিল্পকে সুরক্ষা দিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে আমদানি করা সব ধরনের চালসহ সুগন্ধিযুক্ত চালের দাম বাড়তে পারে। দেশীয় কৃষকদের সুরক্ষায় এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। শিশুদের ছবির বই, ড্রয়িং বই আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক আমদানিতে শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে বইয়ের দাম বাড়তে পারে। মশা ও পোকামাকড় মারার কাজে ব্যবহৃত ব্যাট আমদানিতে এইচএস কোড সৃষ্টি করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে পণ্যটির দাম বাড়তে পারে। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার স্বার্থে ফাইবার অপটিক কেবল আমদানির শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে পণ্যটির দাম বাড়তে পারে। এছাড়া দাম বাড়তে পারে গাম রেজিন, ইউরিয়া রেজিন, ১০ থেকে ১২০ এমভিএ এবং বৈদ্যুতিক জেনারেটর, এলপিজি সিলিন্ডার, পার্টিক্যাল বোর্ড, এডহেসিভ টেপ, ফায়ারডোর, গ্রিজ, লুব্রিকেন্ট অয়েল ইত্যাদি। এছাড়া সব ধরনের বিল (যেমন- ইলেকট্রিক বিল, রেস্তরাঁর বিল), এক হাজার টাকার ওপরের রেডিমেড পোশাক, সোনা, রুপা বা সোনা-রুপার তৈরি গহনা, মিনারেল ওয়াটার, প্লেন ভ্রমণ, প্লাস্টিক ব্যাগ, রোপওয়ে বা কেবল কার রাইড, ইম্পোর্টেড ইমিটেশনের গহনা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোলার ওয়াটার হিটার, আইনী পরিষেবা, লটারির টিকেট, প্যাকার্স ও মুভার্স, ই-রিডিং ডিভাইস, সোনার বার, ইম্পোর্টেড গলফ কার, ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকলের (ভিওআইপি) ইনস্ট্রুমেন্ট, বোল্ডার পাথর, গুড়া ও ভাঙা পাথর, অন্যান্য সুগন্ধি, রডের বার, লোহার কয়েল, মিশ্রিত লোহা, এ্যাঙ্গেল শ্যাপ, আয়রন, নন এ্যালয় স্টিল, বাতি হোল্ডার, অপটিক্যাল ফাইবার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির।