যুক্তরাষ্ট্রে নাইট ক্লাবে গুলিবর্ষণ, নিহত ৫০

 

আহত অর্ধশতাধিক : ইসলামি জঙ্গিদের সন্দেহ

মাথাভাঙ্গা মনিটর: যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর একটি সমকামী নাইটক্লাবে বন্দুকধারীর হামলায় প্রাণ হারালেন কমপক্ষে ৫০ জন। গুলি লেগে গুরুতর জখম হয়েছেন এক পুলিশ অফিসারসহ অর্ধশতাধিক। পুলিশের গুলিতে ওই আততায়ী নিহত হয়েছে। গতকাল রোববার ভোররাতে দক্ষিণ ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরের ভিড়ে ঠাসা পাল্স ক্লাবে অতর্কিত আক্রমণ চালায় ওই আততায়ী। এরপর পুলিশের গুলিতে হামলাকারী নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে হত্যালীলা। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড যে বা যারা চালিয়েছে তারা মানবতায় বিশ্বাস করে না। নিহত এবং আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে এই ঘটনার পর ফ্লোরিডা প্রশাসন জরুরি অবস্থা জারি করে। এই হামলায় কেউ দায় স্বীকার না করলেও ইসলামি জঙ্গিদের সন্দেহ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত বন্ধুকধারীর নাম ওমর মাতিন। তিনি ফ্লোরিডার পোর্ট সেন্ট লুইসের বাসিন্দা।

অরল্যান্ডোর পুলিশ প্রধান জন মিনা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে ক্লাবের ভেতরে গুলি চালাতে শুরু করে ওই বন্দুকধারী। অরল্যান্ডোতে সমকামীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাইটক্লাব পাল্স এ এদিন রাতে ল্যাটিন ফ্লেভার ইভেন্ট। সন্ধ্যা থেকেই দলে দলে আসতে শুরু করেন অতিথিরা। কিন্তু তাদের কেউই দুঃস্বপ্নের এই রাতের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। জন মিনা জানিয়েছেন, ক্লাবের ভেতরে বন্দুকধারী গুলি চালাতে শুরু করার সাথে সাথে তার জবাবে পাল্টা গুলি চালান ডিউটিরত এক পুলিশ অফিসার। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ঘটে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সদস্যদের একাংশকে জিম্মি করার চেষ্টা করে ওই ঘাতক। এই সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। তাদের গুলিতে হামলাকারী নিহত হয়।

ভোর ৫টা নাগাদ ক্লাবের ভেতর থেকে আহতদের উদ্ধার করে চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সাঁজোয়া গাড়ির সাহায্যে ক্লাবের একটি বন্ধ দরজা ভেঙে ফেলা হয়। সেখান দিয়ে অন্তত ৫০ জনের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। রীতিমতো পরিকল্পনা করেই হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, আততায়ীর সাথে একটি অ্যাসল্ট টাইপ রাইপেল, একটি হ্যান্ডগান এবং একটি অপ্রচলিত গোত্রের আগ্নেয়াস্ত্র ছিলো। আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে অরেঞ্জ কাউন্টি সেরিফ জেরি ডেমিংসের ধারণা, সম্ভবত ঘরোয়া ঝামেলার জেরেই নাইট ক্লাবে হামলা চালানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী জাভের আন্তোনেত্তি বলেন, ক্লাবের ভেতর পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে পর পর অন্তত ৪০ রাউন্ড গুলি চলার শব্দ শুনতে পাই। দুজনকে দেখতে পেয়েছিলাম। সারাক্ষণ শুধু গুলি ছোটার আওয়াজে কানে তালা লেগে গিয়েছিলো।

নৈশক্লাবের ভেতর থেকে বেঁচে আসা ক্রিস্টোফার হ্যানসেন বলেন, এটা মর্মান্তিক। একের পর এক গুলির শব্দ শুনতে পাই। সবখানে শুধু রক্তাক্ত দেহ পড়েছিলো। পার্কিং লটে সেগুলোতে লাল, হলুদ ট্যাগ লাগানো হচ্ছিলো, যাতে বোঝা যায় কার দ্রুত সহায়তা দরকার এবং কার অবস্থা ততোটা খারাপ নয়।

ঘটনার সময় নিজেদের ফেসবুক পেইজে অতিথিদের বাইরে বেরোনোর এবং দৌড়ে দূরে সরে যাওয়ার পরামর্শ? দিয়েছিলো নৈশক্লাবটি। সেখানে রিকার্ডো আলমোদোভার নামের এক ব্যক্তি লেখেন, নাচের ফ্লোরে এবং বারে থাকা লোকজন মেঝেতে শুয়ে পড়ে। আমাদের মধ্যে যারা বারের কাছে ও পেছন দিকে ছিলাম এমন কয়েকজন পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে আসতে পেরেছি, তারপর দৌড় দিয়েছি। এক নারী বলেন, ক্লাবের ভেতর থেকে ফোন করার পাশাপাশি এসএমএস পাঠিয়েছিলেন তার মেয়ে, যার বাহুতে গুলি লেগেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, হামলা শুরুর পর থেকে ৪০ থেকে ৫০টি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন তারা।