মেহেরপুরে বৃষ্টির পানির অভাব : পাট জাগ দিতে পারছে না চাষি রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা

 

মেহেরপুর অফিস: এ বছর বর্ষা ঋতুতে মেহেরপুরের আকাশে বৃষ্টি নেই। মেহেরপুর জেলায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেনা চাষিরা। পাট কেটে রোপা আমন লাগাবে সে সুযোগ পাচ্ছে না তারা। ফলে চলতি মরসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে দাম না থাকায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছে মেহেরপুরের চাষিরা।

জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত পাটের আবাদ করেছে চাষিরা। চলতি মরসুমে জেলায় পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৭ বেল। সে লক্ষ্যে এ বছর জেলায় পাটচাষ হয়েছে ২৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। অতিরিক্ত এ পাট চাষের কারণে ধান লাগানোর জমি খালি নেই। এ দিকে এ বছর রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে। পানির অভাবে চাষিরা পাট কেটে জমি খালি করে ধান লাগাবে তার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে এবার রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শ্রাবন মাস শেষে ভাদ্র মাস চলছে। তারপরও মেহেরপুরের আকাশে পানি নেই। যদিও মাঝে-মধ্যে ছিটে ফোটা পানি হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এলাকার নদী-নালা, খাল-বিল, গর্ত বা পুকুরে কোনো জায়গায় এতোটুকু পানি নেই। যে কারণে মেহেরপুরের কৃষক পাট কেটে জাগ দিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পাট কেটে গর্ত বা নালার মধ্যে শ্যালোইঞ্জিনের সাহায্যে পানি জমিয়ে পাট জাগ দিচ্ছে। এতে মেহেরপুরের চাষিরা অতিরিক্ত খরচের মধ্যে পড়ছে। পানি না থাকার কারণে আমন ধান লাগানোর কাজেও চরম বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে পাটের দাম মণ প্রতি মাত্র সাড়ে আটশ’ টাকা হওয়ায় পাটচাষ থেকেও তারা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের পাট চাষি মনির জানান, পাট কেটে কোথাও পানি না পেয়ে একটি গর্ত ভাড়ার মাধ্যমে পাট জাগ দিয়েছি। এলাকার অনেক চাষি জানিয়েছে, বর্ষাকালে মেহেরপুরে বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল, নদী-নালা গর্ত কিংবা পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় তারা পাট কেটে পঁচাতে পারছে না। যদি কোনো গর্তে পাট পঁচানোর জন্য ফেলছে তাতেও প্রতি ২/৩ দিন পরপর ওই গর্তে শ্যালোইঞ্জিনের মাধ্যমে পানি দিতে হচ্ছে। এতে তার অতিরিক্ত ৮শ’ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান যে পাটের বাজার তাতে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছে।

মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কৃষক ফিরোজ আহমেদ মাস্টার ও সদর উপজেলার রুদ্রনগর গ্রামের প্রভাবশালী চাষি প্রভাষক মফিজুর রহমান অভিন্ন সুরে বলেন, প্রতিবিঘা পাটের আবাদে চাষ-মই খরচ, বীজ, সার-বিষ কেনা, সেচ দেয়া, নিড়ানী, পাট কাটা, বাধা, বহন, গর্তভাড়া, পঁচানো, আঁশ ছাড়ানো, শুকানো ইত্যাদি খরচ বাবদ প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপন্ন হয় প্রায় ১২ মণ। যার বর্তমান বাজার দাম সাড়ে ৮শ’ টাকা মণ দরে ১০ হাজার টাকা। হিসেব-নিকেস করে লাভ থাকে পাট খড়ি। তারপরও খড়ি বহনের খরচ আছে। যে কারণে পাটচাষও করার মানসিকতা চাষিরা হারিয়ে ফেলছে। ফিরোজ মাস্টার আরো বলেন, গত বছর ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। চলতি বছরে আবহাওয়া ভালো ছিলো না। সেচ দিয়ে চাষিদের পাট বুনতে হয়েছে। তাই এ বছর পাটচাষ করেনি। প্রভাষক মফিজুর রহমান আরো বলেন, এক হাজার ৫শ’ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হলেই চাষিদের সামান্য লাভ থাকতো। এ বছর যে সব চাষিরা নিজের লাঙল-গরু দিয়ে চাষ করে এবং নিজেরা শরীরে খেটে আবাদ শেষ করেছে তারাই কেবল সামান্য লাভের মুখ দেখতে পেয়েছে। ফতেপুর গ্রামের আরোজ আলী জানান, তার এবার ৩ বিঘা জমিতে পাট আছে। ওই পাট কেটে তার ধান লাগানোর কথা। কিন্তু পানির অভাবে পাটও কাটা হচ্ছেনা। ধানও লাগানো যাচ্ছে না।

বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মেহেরপুরের চাষিরা যেমন বিপাকে পড়েছে; তেমনি পাটের দাম কম হওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। এদিকে অনেক চাষি মনে করছেন, ধার-দেনা করে ৭০ টাকা লিটার দনে ডিজেল কিনে জমিতে সেচ দিয়ে ধান লাগালেও যদি এ বর্ষা ঋতুতে মেহেরপুরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হয় তবে ভাগ্য তাদের কোথায় নিয়ে যাবে? এসব ভাবনা মেহেরপুরের কৃষকদের ভাবিয়ে তুরেছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপপরিচালক শেখ ইফতেখার হোসেন বলেন, পানির অভাব বর্তমানে পাট জাগ দেয়া একটা বড় সমস্যা। আষাঢ় ও শ্রাবন মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে না। আর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে খাল বিলে পানি নেই। কৃষক পাট কাটার ঝুঁকি নিচ্ছে না। তার পরও মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামের মাঠের পাট অর্ধেকের বেশি কাটা হয়ে গেছে। কৃষক সেচ দিয়ে ধান রোপণ করছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে দ্রুত পাট কাটা শেষ হবে এবং কৃষক পূর্ণদমে রোপা আমন চাষ করবে।