মেহেরপুরে বিলুপ্তির পথে দেশিয় প্রজাতির মাছ

মহাসিন আলী, মেহেরপুর: মেহেরপুরের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ছিলো পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, আর গোলা ভরা ধান। কালের বিবর্তনে এই ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে মেহেরপুর জেলার খাল-বিল, হাওড়-বাওড়ে পানি না থাকায় দেশিয় প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। জেলার চাহিদা মেটাতে এখন বিদেশি কার্প জাতীয় মাছে বাজার দখল করেছে। নদীতে পানি না থাকায় আর খাল বিল লিজ দেয়ায় জেলার মৎস্য জীবীরাও বদলে ফেলেছেন তাদের পেশা।
জেলা মৎস্য সম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০৭ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে মেহেরপুর জেলায় ৫৪ প্রজাতির দেশিয় মাছ বিলুপ্তির পথে। এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১৪ থেকে ১৫ প্রজাতির মাছ। এ জেলায় খাল-বিল, পুকুর-নদী, বাঁওড় ও প্লাবনভূমি রয়েছে মোট ৫ হাজার ৮৭টির মতো। এজেলার মাছের চাহিদা ১২ হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন। গেল বছরে উৎপাদন হয়েছিলো ১০ হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন।
নদীর নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে যাওয়া এবং সরকারি খাল-বিল লিজ দেয়ায় পেশা বদলিয়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মৎস্যজীবীরা। লিজ গ্রহণকারী মৎস্যচাষিরা খাল-বিলের দেশিয় প্রজাতির মাছ ধরে বেশি মুনাফার আশায় কার্প জাতীয় মাছ চাষ করছেন। নদী শুকিয়ে যাওয়ায়, খাল বিল থেকে দেশিয় প্রজাতীর মাছ নির্বিচারে নিধন করায় প্রজনন হচ্ছে না দেশিয় প্রজাতীর মাছের। ফলে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ প্রজাতীর মাছ। কয়েক বছর আগে বাইন, ভেদা, গজাড়, চেলা, মলা, খোলসে, কই, চিংড়ি, চিতল, সিং, মাগুড়, বোয়াল, ডাঁড়কি, ছলং- এ মাছগুলো নদ-নদী, খাল-বিল, বাওড় ও পুকুরে দেখা যেত। বর্তমানে এ মাছগুলো বিলুপ্ত প্রায়। বর্ষা মৌসুমে নিম্নবিত্তের মানুষেরা এ মাছগুলো ধরে নিজের চাহিদা মেটানোসহ বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। যে মাছ কয়েক বছর আগেও কেজি প্রতি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতো। সে মাছ এখন কিনতে হচ্ছে ৬শ টাকা থেকে ৮শ টাকায়।
এলাকার মৎসজীবীরা জানান, আগে নদ-নদী, খাল-বিলে দেশিয় মাছ ধরে খেতাম। এখন সরকারি খাল বিল লিজ বৈধ-অবৈধভাবে লিজ নিয়ে কার্প জাতীয় মাচচাষ করতে সার-বিষ দিচ্ছে। এতে দেশিয় প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। ক্রেতা আহসান উল্লাহ জানান, এখন দেশি মাছ বাজারে নেই। যা আছে ৬শ থেকে ৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মৎস্যচাষি রঞ্জন হালদার জানান, পানি না থাকার কারণে দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে বাজারের চাহিদা মেটাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি দিলে এ জেলায় বিলুপ্ত প্রায় মাছ সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো।
জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মেছবাহুল হক জানান, মৎস্য সম্পদ অধিদফতর অভয় আশ্রমের মাধ্যমে দেশিয় প্রজাতীর মাছ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে এরই মধ্যে ৫৪ প্রজাতীর মাছ বিলুপ্তির পথে, ১৪ প্রজাতীর মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন মেহেরপুরের ভৈরব নদ খনন চলছে। এ নদ খনন শেষ হলে এ জেলার মাছের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে সাথে সাথে দেশি মাছের সাধ পাবেন জেলাবাসী। এছাড়া মরা গাঙ, ছেউটিয়া ও কাজলা নদী খনন করা গেলে এ জেলার মাছ অন্য জেলায় রপ্তানী করা সম্ভব হবে।