মেহেরপুরে অনেক ভাটা মালিক নিয়ম অমান্য করে ইট পোড়াতে যাচ্ছেন

 

মহাসিন আলী মেহেরপুর: মেহেরপুর জেলার ইটভাটার মালিকরা নিয়মনীতি অমান্য করে তাদের ভাটা চালু করতে যাচ্ছেন। জেলার মোট ৯১টি ইটভাটা রয়েছে। এদের কোনটির লাইসেন্স নেই। তার ওপর আরও পাঁচটি ইটভাটা যোগ হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্র জানিয়েছেন।

গত ৯ অক্টোবর মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে স্থানীয় ইটভাটা মালিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহের সভাপতিত্বে একসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন ও উপপরিচালক ইসরাত জাহান এবং পরিবেশ অধিদফতর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মুন্সি মনিরুজ্জামান। সভায় জেলার ৯১টি ইটভাটার মধ্যে ৪টি জিকজ্যাক, ৪৪টি স্থায়ী চিমনি এবং ৪৩টি ব্যারেলের তৈরি অস্থায়ী চিমনির বলে সভাকে অবহিত করা হয়। কিন্তু বর্তমানে জেলার সদর উপজেলার সুবিদপুর, খোকসা ও আশরাফপুর এবং মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর ও পুরন্দরপুর গ্রামে ৫টি ব্যারেলের তৈরি অস্থায়ী চিমনির ইটভাটা যোগ হতে হচ্ছে।

জেলার স্থায়ী চিমনির ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুল বলেন, প্রতি বছর আমরা ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ করি। কিন্তু ব্যারেলের তৈরি ইটভাটার মালিকরা সরকারকে কোনো রাজস্ব দেন না। তিনি আরও বলেন, একটি স্থায়ী চিমনির ও একটি ব্যারেলের তৈরি চিমনির ইটভাটার খরচ এক নয়। কিন্তু ব্যারেলের তৈরি চিমনির ইটভাটার ইট ও স্থায়ী তৈরি  চিমনির ইট ভাটার ইটের মূল্য একই। এতে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন।

এদিকে ব্যারেলের তৈরি ইটভাটার একজন মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বছরের প্রথমে তারা তাদের ইটভাটায় অনেক টাকা খরচ করেছেন। এখন তাদের যদি ইট তৈরির অনুমতি দেয়া না হয় তবে তারা অর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে এবং ইটের দাম বৃদ্ধি পাবে।

খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, জিকজ্যাক পদ্ধতির ভাটা পরিবেশ বান্ধব এবং এটা ইট তৈরিতে ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ী বৈধ। তিনি আরো বলেন, ব্যারেলের তৈরি অস্থায়ী চিমনির ইটভাটা অন্যান্য ইটভাটার চেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণ করে। স্থায়ী চিমনীর ইটভাটাকে জিকজ্যাক চিমনিতে রুপান্তরিত করা যায়। কিন্ত ব্যারেলের তৈরি চিমনির ইটভাটাকে জিকজ্যাক চিমনিতে রুপান্তরিত করা সম্ভব নয়। তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি দেখভাল করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

১৯৯২ সালের ইট পোড়ানোর আইন অমান্য করলে তাকে ১০ বছর জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রতিটি ইটভাটার জন্য সর্বোচ্চ দেড় একর পতিত জমি ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মালিকরা ইটভাটা করতে লোকালয়ের ৫ একর বা তার বেশি আবাদী জমি ব্যবহার করছেন। বর্তমান আইনে প্রতিটি ভাটায় বছরের সর্বোচ্চ ৪ লাখ ইট পোড়ানো যাবে। কিন্তু আইন অমান্য করে প্রতিটি স্থায়ী চিমনীর ইটভাটায় বছরে ৬০ লাখ ও ব্যারেলের চিমনীর ইটভাটায় ২১ লাখ ইট পোড়ানো হচ্ছে। এদিকে তারা আইন অমান্য করে ইটভাটাতে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছেন।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক পরিমাল সিংহ সাংবাদিকদের জানান, আমি ইটভাটার মালিকদের বৈধভাবে ইট পোড়াবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এক্ষেত্রে অবৈধভাবে কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন আমি আমার অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি যেনো কোনভাবে অবৈধ ইটভাটা মালিকরা ইট তৈরিতে বিনিয়োগ না করেন। অন্যথায় তারা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আলাপকালে জেলা প্রশাসক দৃঢ়তার সাথে বলেন মেহেরপুর জেলায় অবৈধ কোন ইটভাটা চালাতে দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসনের এনডিসি রামানন্দ পাল মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজাপুর-বারাকপুরের আমির হামজার ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৪শ মণ কাঠ জব্দ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ও ব্যারেলের চিমনি ভাঙচুর করার নির্দেশ দেন। তিনি একই দিন একই গ্রামের জান মহাম্মদের ইটভাটায় ৩শ মণ কাঠ জব্দ করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।