মেলামাইন স্টিল ও প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার : কাঁসাপট্রিতে কাঁসা নেই

ধুনিকতার অবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহ কাঁসার বাসন

দর্শনা অফিস: টং… টং… টং… কাঁসার ঘণ্টা বাজিয়ে সুরের প্রতিধ্বনি তুলে গ্রামের পথে পথে কোনো কাঁসারিকে আর বলতে শোনা যায় না নেবেন গো কাঁসার বাসন কোসন? ভবিষ্যতের সঞ্চয় হিসেবে গাঁয়ের বধূরা আর জমিয়ে রাখে না কাঁসার বাসন। কাঁসার বড় (জাম) বাটিতে করে কৃষকের জন্য ভাত বেঁধে দেয় না গৃহিনীরা। সকালের সূর্যের আলোক ছটায় চমকিত হয় না নববধূর কাখের স্বর্ণ মোনহর কাঁসার কলসি। বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম তার বিখ্যাত একটি গানে বলেছেন, কাকনে কলসি বাজে, কতো কথা কতো সাজে নজরুল ইসলামে এ গানের মতো কানে আর ভেসে আসে না কলসি আর কাকনের ঝনাৎ ঝনাৎ আওয়াজ। এক সময় সৌখিন পরিবারে অভিযাত্য বিকাশে কাঁসার ব্যবহার ছিলো আবশ্যকীয়। অতিতেয়তায় কাঁসাসামগ্রী ব্যবহারের কোনো বিকল্প ছিলো না। কাঁসার পানের বাটা তখনকার পরিবারে ছিলো একটি বাড়তি ঐতিহ্য। কাঁসার গড়গড়িতে তামুক খাওয়া ছাড়া জমিদারিত্ব ফলতো না জমিদারদের। এখন আর গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা জিয়াবত (নিমন্ত্রন) খেতে কাঁসার সামগ্রী না পেয়ে কিনতে দেখা যায় মেলামাইন, স্টিল ও প্লাস্টিক সামগ্রী। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই ব্যাপকভাবে বাড়ছে আধুনিক সামগ্রীর ব্যবহার। আধুনিকতার অবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাঁসাসামগ্রি। দর্শনা রেলবাজারের ঐতিহ্যবাহী কাঁসাপট্রি ঠিকই আছে কিন্তু সেখানে নেই কাঁসা সামগ্রী। এ বাজারের এক সময়ের বিশিষ্ট কাঁসাব্যবসায়ী সোহাগ অ্যালুমোনিয়াম স্টোরের মালিক মোখলেসুর রহমান জানান, এখন বদলেছে দিন, বদলেছে সময়। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রেতারা ঝুঁকে পড়েছে মেলামাইন, স্টিল ও প্লাস্টিক সামগ্রীর দিকে। এখন আর কাঁসার সামগ্রী কেনা যেমন ক্রেতা নেই, তেমনিভাবে কাঁসাসামগ্রী আর পাওয়া যাচ্ছে না। যা ২/১টি পাওয়া যাচ্ছে তা আবার দাম অতিরিক্ত চড়া। এক সময় গ্রামাঞ্চলের মানুষ মুখে ভাত, বৌভাত, খাৎনা ও বিয়ে বাড়িতে (জিয়াবত) নিমন্ত্রণ খেতে কাঁসার জগ, বদনা, গ্লাস, কলসি ইত্যাদি উপহার সামগ্রী হিসেবে নিতো। এখন ঠিক তার উল্টো। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে কিনছে বিভিন্ন রকমের সামগ্রী। তাছাড়া এখনকার প্রজন্ম কাঁসা সম্পর্কে তেমনটি জানে না বললেই চলে।

অন্যদিকে আমাদের দেশে যতোটুকুই বা পুরোনো কাঁসাসামগ্রী রয়েছে। তা আবার ভাংড়ি হিসেবে চোরাচালানিরা সীমান্ত পথে ভারতে পাচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এভাবেই দিন বদলের সাথে সাথে একদিন হয়তো আধুনিকতার আবর্তে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী কাঁসাসামগ্রী। কাঁসা, তামা এ দেশের মূল্যবান সম্পদ, এ সম্পদ রক্ষা করা আপনার আমার সকলের দায়িত্ব। মূল্যবান এ ধাতুসামগ্রী কতিপয় চোরাচালানি ভাংড়ি হিসেবে যেভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার শুরু করেছে। এভাবে পাচার হতে থাকলে একদিন এ দেশে গল্প হিসেবেই থাকবে কাঁসাসামগ্রীর নাম। কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে মূল্যবান এ সম্পদ ভাণ্ডার। তাই এখই ওইসব চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঐতিহ্যবাহী এ সামগ্রী রক্ষা করা জরুরি বলে দাবি সচেতনমহলের।