মারণাস্ত্র একে-৪৭ এর উদ্ভাবকের মৃত্যু

মাথাভাঙ্গা মনিটর: আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে যেটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা হয়, সেই একে-৪৭ এর উদ্ভাবক মিখাইল কালাশনিকভ মারা গেছেন। রাশিয়ার ইউরাল পর্বতমালার কাছে নিজের শহর ইজভেস্কের একটি হাসপাতালে গত সোমবার তার মৃত্যু হয়। ৯৪ বছর বয়সে মারা যাওয়া কালাশনিকভ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই মাত্র ২০ বছর বয়সে একে-৪৭ রাইফেলের নকশা তৈরি করেন, যদিও জীবনে কখনো স্কুলে পা রাখা হয়নি তার। চরম বিরূপ পরিবেশেও ঠিকমতো গুলি বের হওয়ার বিষয়ে অদ্বিতীয় এ রাইফেল খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের গেরিলা যোদ্ধাদের কাছে। ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত সামরিক সেনাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে অ্যাসল্ট রাইফেল অন্তর্ভুক্ত হয়। এখন পর্যন্ত রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ এ অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে। আবিষ্কারের পর দশকের পর দশক ধরে গেরিলা যোদ্ধাদের পছন্দের অস্ত্র একে-৪৭-এর ব্যবহার এবং প্রতিরোধ কৌশল নিয়ে সমরাস্ত্রবিদরা গবেষণা চালিয়ে আসছেন। একে-৪৭ এর উদ্ভাবক তার দেশে সোভিয়েত যুগে যেমন ছিলেন বীরের আসনে, কমিউনিস্ট শাসন অবসানের পর এখনো তাকে দেখা হয় সেই চোখেই। সোভিয়েত যুগে ‘অর্ডার অফ লেনিন’ ও ‘হিরো অফ সোসালিস্ট লেবার’ খেতাব পান কালাশনিকভ। আর ৯০তম জন্মদিনে তাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘হিরো অফ রাশিয়া’ খেতাব দিয়ে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছিলেন, তিনি হচ্ছেন জাতীয় ব্র্যান্ড, যাকে নিয়ে প্রত্যেকটি রাশিয়ানই গর্বিত। কালাশনিকভ বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হলেও তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানাননি দেশটির উডমার্শা প্রদেশের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি, যিনি মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। এ বছরের জুন মাসে কালাশনিকভের শরীরে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখার জন্য যন্ত্র বসানো হয়েছিলো। ১৭ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।  কালাশনিকভের জন্ম সাইবেরিয়ায় ১৯১৯ সালের ১০ নভেম্বর পশ্চিম সাইবেরিয়ায়। এক কৃষকের ১৮ সন্তানের একজন কালাশনিকভ কালে হয়ে ওঠেন আগ্নেয়াস্ত্র জগতে কিংবদন্তি। তবে নিজের উদ্ভাবিত অস্ত্রে মানুষের মৃত্যুতে নিজেই ব্যথিত ছিলেন এ রুশ। এটা আমার জন্য খুবই বেদনার যে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠির হাত থেকে আমার অস্ত্র গুলি ছুড়ছে, মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে বলে যান কালাশনিকভ, যার কলমে রচিত হতো কবিতাও।