মানসিক ভারসাম্য হারানো একজন মুক্তিযোদ্ধার করুণ চিত্র : সনদ-প্রত্যয়নপত্র থাকলেও ভাতা প্রদানে নেই কোনো অগ্রগতি

মানসিক ভারসম্য হারানো একজন মুক্তিযোদ্ধার করুণ চিত্র : সনদ-প্রত্যয়নপত্র থাকলেও ভাতা প্রদানে নেই কেনো অগ্রগতি

স্টাফ রিপোর্টার: ভদ্রতায় ছিলেন অনুকরণীয়। পরিশ্রমে? পরিছন্ন পরিকল্পনায় পাওয়া যেতো প্রজ্ঞার স্বাক্ষর। হঠাৎ বিগড়ে গেলেন। ভদ্র মানুষটা কিছুদিনের মধ্যেই মস্তিষ্ক রোগে আক্রন্ত ‘পাগল’ বলে পরিচিতি পেতে লাগলেন। চিকিৎসা? কে দেবে অর্থ? অথচ তার পরিবারের দাবি, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নাম নিজাম আলী।

চুয়াডাঙ্গা শহরতলি দৌলাতদিয়াড় সরদারপাড়ার মৃত উমবাত আলীর বড় ছেলে নিজাম আলী। ছাত্র জীবনে মেধাবী ছিলেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলে হয়েও সাধ্যমতো লেখাপড়াটা চালিয়ে নিয়ে মেট্রিকের পর সংসারের হাল ধরতে ব্যবসার দিকে ঝুঁকতে হয়। দোকান দেন। কাঠপট্টিতে ছোট্ট দোকান দিলেও তাতে মেধা ও রুচির ছাপ ছিলো স্পষ্ট। ভালোই চলছিলেন তিনি। স্ত্রী, এক ছেলে দু মেয়েকে নিয়ে সাজানো সংসার। আজ থেকে আনুমান দেড় যুগ আগে হঠাৎই মস্তিষ্ক বিকৃতি রোগে আক্রান্ত হন তিনি। পরিবারের সদস্যরা সাধ্যমতো চিকিৎসা করান। কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন শিশু সন্তানদের মুখে দু বেলা দু মুঠো আহার তুলে দিতে বঙ্গজ বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। বড় মেয়ে বিয়ের উপযোগী হয়ে ওঠে। বিয়ে দেয়া হয় তার। একমাত্র ছেলে মামুন অর রশিদ কয়েক বছর ধরে পরিশ্রম করে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর মতো উপযোগী হয়ে উঠেছে। আর অপর মেয়ে মাবিয়া খাতুন? অসম্ভব মেধাবী। বাণিজ্য বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখার খবরে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন ছুটে যান তাদের জীর্ণ কুঠিরে। দশা দেখে লেখাপড়ার ভার নেন তিনি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত টোটন জোয়ার্দ্দারই মিটিয়ে আসছেন লেখাপড়ার ব্যয়। মাবিয়া খাতুন এখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পৌঁছে গেছে প্রায় শেষ বর্ষে।

মাবিয়া, মামুন, সোনিয়ার পিতা নিজাম আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, দেশ রক্ষা বিভাগের প্রদত্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র রয়েছে। রয়েছে চাপড়ার ইয়থ ক্যাম্পের সনদও। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান, আরশেদ আলী, মনোয়ার হোসেন, গোলাম সারোয়ারের দেয়া প্রত্যায়নও রয়েছে তার। অনলাইনে সাহায্যের জন্য আবেদন করার প্রমাণপত্রও বিদ্যমান। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাওয়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তদবির করারও তেমন কেউ নেই। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মানসিকভাবে ভারসাম্য হারানোর ফলে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটে নিজাম আলীর।

পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন, মানসিকভাবে ভারসম্য হারানো বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম আলীর জীবনটা কি শেষ পর্যন্ত সরকারের সহযোগিতা ছাড়াই কাটবে?