মাইক্রোসফট্ ছাড়ছেন বিল গেটস

মাথাভাঙ্গা অনলাইন:

৩৮ বছর আগে বিল গেটস এবং বন্ধু পল অ্যালেন প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট্  কর্পোরেশন। একাধারে ১৩ বছর বিশ্বের শীর্ষ ধনী ছিলেন বিল গেটস। প্রযুক্তি দুনিয়ায় গেটসকে সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে এখনও বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের কানাচে কানাচে প্রযুক্তির প্রসারে তাঁর অবদানকেই বড় করে দেখা হয়।

সম্প্রতি তাঁকেই মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের  চেয়ারমান পদ থেকে অপসারণের দাবি তুলেছেন তাঁরই অধীনস্ত, কোম্পানির শীর্ষ তিন বিনিয়োগকারী। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত কোম্পানির এমন সূত্রের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ খবরটি পেয়েছেন বিশ্বের তাবৎ গণমাধ্যম। কোম্পানির পরিচালনা  পর্ষদ এই তিন বিনিয়োগকারীর নাম প্রকাশ না করার ঘোষণা দিলেও তাদের দাবি বা ইচ্ছের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে  প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই তিন বিনিয়োগকারী সম্মিলিতভাবে মাইক্রোসফটের ৫ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক। কোম্পানির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বিল গেটস একাই সাড়ে ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক। বিল গেটস এককভাবে কোম্পানির সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিক। সহবিনিয়োগকারীদের দাবি মতে, গেটস যদি তাঁর পদ ছেড়ে দেন তা’হলে কোম্পানির জন্য এই পরিস্থিতি ইতিবাচক হবে । অবশ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন উল্টো কথা।
তিন বিনিয়োগকারী মনে করেন মাইক্রোসফটে বিল গেটসের প্রভাব যে কারো তুলনায় অনেক  বেশি। কোম্পানির  সিইও ষ্টিভ বলমার খুব শীঘ্রই বিদায় নেবেন। তাঁর উত্তরসুরি নির্বাচনে গেটস হস্তক্ষেপ করতে পারেন বলে তাঁরা আশঙ্কা করেন। এছাড়া গেটসের প্রভাবের কারণে কোম্পানির বিভাগীয় প্রধানদের সিদ্ধান্ত সবসময় প্রভাবিত হয়। তাঁর প্রভাবের কারণে কোম্পানিতে কেউ স্বাধীনভাবে মতামত প্রদান ও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। যে কারণে অনেক গুরুত্বপুর্ণ ও দরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটে। বিনিয়োগকারীদের মতে, এসব কারণে মাইক্রোসফটের চলমানতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসার প্রসার।

বিশ্লেষকদের মতে, মাইক্রোসফট্ ১৯৮৬ সালে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়।এর আগে কোম্পানিতে গেটসের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ। গেটস সম্প্রতি এক ঘোষণায় বলেছেন, তিনি মাইক্রোসফট-এ থাকা তার শেয়ার থেকে প্রতি বছর  ৮ কোটি ডলার মুল্যের শেয়ার বিক্রি করবেন। এই হিসেবে ২০১৮ সাল নাগাদ মাইক্রোসফট-এ তার কোন শেয়ারই থাকবে না।

কোম্পানির  সাম্প্রতিক প্রস্তুতকৃত অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০০০ সালে বলমারকে প্রধান নির্বাহী নিয়োগের পর থেকে গেটস কোম্পানির কার্যক্রমে তাঁর অংশগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি তাঁর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশানেই বেশি সময় দিচ্ছেন। এই প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এখন বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ ৩৮ বছর পর মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে সরে দাঁড়াতে বলছেন। বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী (সিইও) ষ্টিভ বলমারকেও চাপের মধ্যে রেখেছেন। কোম্পানির কর্মদক্ষতা ও শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য অংশীদাররা এখন বলমারের বিকল্পও খুঁজতে শুরু করেছেন। তারা গেটসকেও সরাসরি সরে দাঁড়ানোর কথা বলবেন সহসাই-এমন বিষয় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গেটস বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছেন মাইক্রোসফটকে। বিপুল প্রসার ঘটিয়েছেন প্রযুক্তি বাণিজ্যের।  গেটসবিহীন মাইক্রোসফট  কতদূর যাবে সেটা নিয়েও ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে প্রযুক্তি দুনিয়ায়। এতকিছুর পরও বিশ্বের এক নম্বর  প্রযুক্তি জায়ান্ট সরাসরি কিছু বলছেন না।