মসজিদের দানবক্স থেকেও টাকা চুরি

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা তহবাজার থেকে গভীর রাতে চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাজারের নৈশপ্রহরীর হাতে আকাশ (১১), সজিব (১২) ও এনামুল (১৩) নামের তিন শিশু-কিশোর আটক হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দামুড়হুদা বাজারের বিভিন্ন দোকানে চুরিসহ ৩টি মসজিদের দানবাক্স থেকেও টাকা চুরির কথা অকপটে স্বীকার করেছে ওই তিন কিশোর। সেই সাথে প্রকাশ করে দিয়েছে নেপথ্যের কয়েকজনের নাম-ঠিকানা। নৈশপ্রহরীর হাতে আটক পার-দামুড়হুদার ওই তিন কিশোরই দামুড়হদা মডেল পাইলট হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। জীবনে আর কখনও চুরি করবে না এবং নিয়মিত স্কুলে যাবে এমন প্রতিশ্রুতিতে এবং তাদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি ও দামুড়হুদা বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এ যাত্রায় তাদের ছেড়ে দিলেও নেপথ্যের কয়েকজনকে খুঁজছে পুলিশ। গত বুধবার রাত ২টার দিকে দামুড়হুদার টবাজারের একটি কাঁচামালের দোকানে চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাজারের নৈশ্যপ্রহরীরা তাদেরকে আটক করে।

জানা গেছে, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের পার-দামুড়হুদার আশাদুলের ছেলে এনামুল, একই গ্রামের রহিদুলের ছেলে সজিব ও শফি উদ্দিনের ছেলে আকাশ এ তিনজনই দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ ছাত্র। এরা ছোট থেকেই নিয়মিতভাবে স্কুলেও যায় না এবং লেখাপড়া না করে গভীর রাত পর্যন্ত বাজারে ঘুরে বেড়ালেও এরা কোথায় যায় কি করে তা নিয়ে পরিবারের লোকজনের কোনো মাথাব্যথা ছিলো না। এভাবেই এরা বেড়ে উঠতে থাকে। পা বাড়ায় নেশার জগতে। প্রথমে ধূমপান দিয়ে নেশা শুরু করলেও ইদানিং বিড়ি-সিগারেটের পাশপাশি ফেনসিডিল সেবনও শুরু করে তারা। আর এ নেশার টাকা জোগাড় করতেই তারা বেছে নেয় চুরির পথ। দামুড়হুদা তহবাজার থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ডের কয়েকটি দোকানে কয়েক দফায় তারা চুরি করে। এমনকি দামুড়হুদা দশমী জামে মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদসহ তিনটি মসজিদের দানবাক্স থেকেও তারা চুরি করে টাকা। আর এসবই করেছে কয়েকজনের প্ররোচনায়। গত বুধবার রাত ২টার দিকে দামুড়হুদা টহবাজারে চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাজারের নৈশপ্রহরীর হাতে ধরা পড়ে পার-দামুড়হুদার শফির ছেলে আকাশ। কিশোর আকাশ নেশ্যপ্রহরীদের কাছে চুরির কথা স্বিকার করে এবং তার সাথে কে কে ছিলো তাদের নামও প্রকাশ করে দেয়। নৈশ্যপ্রহরীরা পরদিন সকালে পালিয়ে যাওয়া ওই দু কিশোর সজিব ও এনামুলকে বাজারে ধরে নিয়ে আসে এবং বিষয়টি দামুড়হুদা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলীকে জানান। বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ তাদের অভিভাবকদের ডেকে আনেন এবং অভিভাবকদের সামনেই শুরু করেন জিজ্ঞাসাবাদ। ওই তিন কিশোর চুরির কথা অকপটে স্বীকার করে বলে পার-দামুড়হুদার শাহজামালের ছেলে ছাত্রদল নেতা ফিরোজ হাসাস মন্টু, একই গ্রামের শরীফের ছেলে জাহাঙ্গীর ও শফির ছেলে পারভেজ তাদের চুরির টাকা ভাগ নেয়। এমনকি তাদের পরামর্শেই মসজিদের দানবাক্স থেকেও টাকা চুরি করেছে বলে জানায় ওই তিন কিশোর ছাত্র। জিজ্ঞাসবাদ শেষে তাদেরকে থানায় নেয়া হয়। ওই তিন কিশোর জীবনে আর চুরি করবে না এবং নিয়মিতভাবে স্কুলে যাবে এবং লেখাপড়া করবে বলে জানায়। এরা যদি একদিন স্কুলে না যায় অভিভাবকরা পরদিন থানায় এসে তা ওসিকে জানাবে অভিভাবকদের এমন প্রতিশ্রুতিতে তিনি ওই তিন শিশু কিশোরকে এবারের মতো ছেড়ে দেন।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই তিন শিশু-কিশোরের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে তাদের ভালো হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে ছাড় পাবে না যারা ওদের খারাপ পথে নামতে প্ররোচনা দিয়েছে।