ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে নারী জঙ্গি ইউনিট

স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গি সংগঠনগুলোতে নারী জঙ্গির সংখ্যা বাড়ছে। দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমেই নারী ইউনিটের শক্তি বৃদ্ধির কাজ চলছে। পরিবারের একজন জঙ্গি সদস্যের দায়িত্ব হচ্ছে, তার পরিবারের অন্য সদস্যদের জঙ্গি সংগঠনে অন্তর্ভূক্ত করা। বাবা, ভাই ও বোনের পাশাপাশি স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ শ্যালক, ভগ্নিপতি সকলকেই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য করা হচ্ছে। সাংগাঠনিকভাবে জঙ্গিরা সমাজের অন্যদের সাথে চলাফেরা করতে পারছে না বলে তারা নিজেরাই নিজেদের সমাজ তৈরি করছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও হিযবুত তাহরীর এই দুই সংগঠনের নারী ইউনিট সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। হিযবুত তাহরীরের ছাত্রী মুক্তি সংস্থা নামে একটি শাখা আছে। এর বাইরে আনসার আল ইসলাম ও আল্লাহর দলের আলাদা নারী ইউনিট আছে। পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারী জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। পুলিশ ও র্যাবের বিভিন্ন অভিযানে এ পর্যন্ত ১০৫ জন নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের প্রায় সবাই পারিবারিকভাবে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, এককভাবে কোনো নারীর জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম চালানোর তথ্য আমরা পাইনি। স্বামী বা পরিবারের মাধ্যমেই এসব নারী জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এসব নারী জঙ্গিদের অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনার ঘটনা ঘটেনি। এরা পরিবারের মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমিত রেখেছে। সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র উত্থান হয়েছে পারিবারিকভাবে। জেএমবি শূরা কমিটির সাবেক প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান তার কন্যা আফিফাকে বিয়ে দিয়েছিলেন শূরা কমিটির অপর সদস্য আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে। শায়খ আব্দুর রহমানের ছোট ভাই আতাউর রহমান সানি ছিল জেএমবির শূরা কমিটির সদস্য।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা সূত্র জানায়, ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও অ্যাপসের মাধ্যমে নারীরা এখন তাদের দাওয়াতি কার্যক্রম চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা টেলিগ্রাম ও থ্রিমার অ্যাপস ব্যবহার করছে। তাদের গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে, আউলাকী সিরস, টাইফুন, গোয়েন্দা টিম, অনুবাদ, আনসার গ্রুপ, নাছিদ গ্রুপ, কোরআন তেলাওয়াত গ্রুপ, ফিকাহ গ্রুপ ও কিতালে গ্রুপ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম শাখার এক গবেষণায় দেখা গেছে, পারিবারিভাবে বিয়ের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি তাদের নারী ইউনিটের নেটওয়ার্ক জোরদার করছে। নব্য জেএমবি’র একজন দাওয়াতী সদস্য যখন অন্য জেলায় দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে যান তখন এহসার সদস্যের দারস্থ হন। অনেক সময় এহসার সদস্যের বাসায় তারা থাকেন। এসময় এহসার সদস্য তার ছোট বোন অথবা আত্মীয় স্বজনদের কারো সাথে ওই দাওয়াতী সদস্যের বিয়ে দেন। আবার এহসার সদস্য অনেক সময় নিজেদের সদস্যের বোন অথবা কাছের সম্পর্কের কাউকে বিয়ে করেন। এ ক্ষেত্রে নারী সদস্য বাড়ানোর জন্য একাধিক বিয়ের ঘটনাও ঘটছে।

নারী জঙ্গিদের কার্যক্রমের তথ্য দিয়ে র‌্যাব সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে র‌্যাব রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে মারজিয়া আক্তার সুমি (১৯) ও তার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে সুলতান মাহমুদ ওরফে মাহমুদ (১৮) এবং আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিনুল (৩৪) ও তার স্ত্রী নাহিদা সুলতানাকে (৩০) গ্রেফতার করে। সুমি ফেসবুকে গ্রুপ প্রভাতের আলোর সাথে যুক্ত হয়ে কোটিপতি জামাই নামে আইডিতে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করতো। এতে সুলতান মাহমুদের সাথে তার পরিচয় হয় এবং জিহাদি কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হন। মাহমুদের সাথে টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে সিরিয়ায় আইএস’র কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা হয়। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হিযরত করেন এবং সিরিয়ায় যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। একইভাবে নাহিদা সুলতানা পীর বংশের পোলা নামে ফেসবুকের একটি আইডিতে আমিনুল ইসলামের সাথে সংযুক্ত হন। তারা জিহাদি কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন। এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর নাহিদা জানতে পারেন যে আমিনুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী রয়েছে। তাকে জিহাদি পথে নারী সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমিনুল বিয়ে করেন।